সাজন বড়ুয়া সাজু: কক্সবাজার জেলায় প্রশাসনের কাছে একের পর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ধরা খেলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলায় এ পর্যন্ত অনেকে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার পরেও তারা এখনও বর্তমানে আবারও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়েছে। জমজমাট ভাবে তাদের ব্যবসা জমে উঠেছে বলে এলাকার সচেতন নাগরিকেরা জানান।
এলাকাবাসীর তথ্য মতে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলায় একটি মাদকের স্বর্গ পরিণত হলে, কিন্তু টেকনাফকে প্রশাসনের কঠিনভাবে নজরদারি করা দরকার। টেকনাফ থেকে ইয়াবা মূলত সারাবিশ্বে পাচার করা হচ্ছে। মরণনেশা ইয়াবার মতো অভিশপ্ত কক্সবাজার জেলায় আনাচে-কানাচে ব্যবসা গড়ে উঠেছে। কক্সবাজার সদরে টেকনাফ থেকে পালিয়ে আসা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে রয়েছে।জানা যায় তারা কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন অলিগলিতে আত্মগোপনে থাকা সত্ত্বেও ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করা আসছে।
এই ব্যবসাতে বিভিন্ন নামিদামি ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা গেছে । অনেকে টেকনাফ থেকে পালিয়ে আসে কক্সবাজারের বিত্তবান এবং প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রশ্রয় নিয়েছেন । এবং তাদের মূলত তারগেট হল ছন্দবেশী রাজনৈতিক সহযোগিতা পাওয়া। অনুসন্ধানে দেখা যায় কক্সবাজার শহরে একের পর এক লোট করা হচ্ছে এবং একের পর এক মাদকের চালান আটক করা হচ্ছে তবে এখনো থেমে নেই এসমস্ত অবৈধ ও অপকর্ম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে যে, জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এটা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য। এ ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম বলতে যেমন স্বপ্ন মানে হচ্ছে আমরা রাতে ঘুমের মধ্যে যেটা স্বপ্ন দেখি সেটা নয়। যেটা অর্জন করার জন্য আমার ঘুমকে নষ্ট করে সেটাই স্বপ্ন। আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সুযোগ সৃষ্টি করবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকবিরোধী প্রচারণায় সবাই ভূমিকা রাখবে এবং সরকারের একজন দূত হিসেবে সবাই কাজ করবে। তাহলেই জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যে সুখী-সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পাওয়া সম্ভব হবে।
মাদক আমাদের দেশে তিনশ’ বছরের একটি পুরনো সমস্যা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে যে যুদ্ধ হয়েছিল; ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষে আধিপত্য করার মূল কারণ ছিল মাদক ব্যবসা।
জঙ্গি ও মাদক- রাষ্ট্রের এ দুটি বড় সমস্যা। জঙ্গি মোকাবেলায় বলা যায়, সরকার অনেকাংশেই সফল। কিন্তু মাদকের ক্ষেত্রে আমাদের যেভাবে সফল হওয়ার কথা ছিল সেভাবে পারছি না- এই বাস্তবতাকে আমাদের স্বীকার করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যে নিয়ন্ত্রণের কথা বলছে, তারা তা কতটুকু করতে পারছে, তাদের সক্ষমতা কতটুকু কিংবা তাদের কী কী কাজ করা প্রয়োজন, কী কী কাজ করছে; এ বিষয়গুলো বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, তাদের সক্ষমতার ক্ষেত্রটা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একেবারেই কম।
মাদক মূলত আমাদের দেশে আসে মিয়ানমার থেকে। প্রায় ২১৭ কিলোমিটারের সীমানা হচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে। তার মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার হচ্ছে জলপথ, বাকিটা স্থলপথ। মাদক একেক সময় তার রূপ বদলায়। আজকের যে মাদকটাকে ইয়াবা বলছি, সময়ের বিবর্তনে এই ইয়াবা আরেক নামে আসবে। একসময় ফেনসিডিল ছিল ব্যাপক প্রচলিত মাদক এবং তার ছিল রমরমা ব্যবসা। তারও আগে মদ, আফিম, কোকেন, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি ছিল। যদিও হেরোইন এখনও অত্যন্ত লাভজনক মাদক। অর্থাৎ এখন যে মাদকগুলো বন্ধ আছে তা কিন্তু নয়। ভিন্ন নামে এগুলো আসছে। ফেনসিডিল যতটুকু লাভজনক ব্যবসা, বহন করতে যতটুকু কষ্ট; এর চেয়ে ইয়াবা অনেক সহজ। ইয়াবা এত ছোট ট্যাবলেট, খুব সহজেই বহন করা যায়। ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। আর এটা প্রমাণিত- মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই মাদক ব্যবসায় সরাসরি যুক্ত।
সবাই জানি, মাদক বিশেষ করে ইয়াবা আসার রাস্তা কোনটি। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে আমরা বন্ধ করতে পারছি না কেন? ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-চট্টগ্রাম, টেকনাফে প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে। এভাবেই কোনো না কোনো মাধ্যমে মাদক মিয়ানমার থেকে আমদানি হচ্ছে। ধরা যাক, টেকনাফ বর্ডার কন্ট্রোল করা হলো। তখন দেখা গেল নদীপথে সেটা পটুয়াখালী বা অন্য পথে দেশের অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বিশাল সমুদ্রে সব নৌকা চেক করার সুযোগ আসলে আমাদের নেই। তা ছাড়া মাদক কার কাছে আছে, কে পরিবহন করছে, কোন পথে যাচ্ছে, বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় বা সুযোগ নেই। তাই অনেক সময় আমরা নিরুপায়।
একটা ইয়াবা ট্যাবলেটের দাম মিয়ানমার বা টেকনাফের সীমান্ত এলাকায় ২০, ৩০, ৪০; সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত। সেই ট্যাবলেট ঢাকায় বা এর আশপাশে বিক্রি হয় ২৫০, ৩০০, ৪০০ টাকায়। অনেক সময় এরও বেশি। বোঝাই যাচ্ছে, কত গুণিতক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবাক করার মতো বিষয়, এই মাদক সরবরাহ বা পরিবহনে শিশু ও নারীরা যুক্ত হচ্ছে।
নির্বাহী সম্পাদক