উজবেকিস্থানের রাজধানী তাসখন্দে শুরু হয়েছে দু’দিনের ‘মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া : আঞ্চলিক যোগাযোগ, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন যোগ দিয়েছেন এ সম্মেলনে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সম্মেলনের সাইড লাইনে তিনি পৃথক বৈঠক করেছেন ভারত, চীন ও তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে। এসব বৈঠকে উঠে এসেছে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আলোচনা। তবে আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও কোভিড ভ্যাকসিন ইস্যু। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বৈঠকে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনি বাংলাদেশের প্রশংসা করেন, তেমনি তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং উভয় দেশের কোভিড পরিস্থিতি ও টিকাদান প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্সনের ব্যাপারেও আলোচনা করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে টিকা সরবরাহের কার্যক্রম আবারও চালু হওয়ায় বৈঠকে আনন্দ প্রকাশ করেন ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুইদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির পর যৌথ উদ্যোগে চলমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পুনরায় শুরুর বিষয়েও বৈঠকে গুরুত্বারোপ করা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে ড. মোমেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠককালে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের পাঠানো ভিডিও বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানান মোমেন। একইভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তা বিনিময় করায় ড. মোমেনকে ধন্যবাদ জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কোভিড পরিস্থিতিতে পরামর্শ প্রদান এবং উপহার হিসেবে ভ্যাকসিন প্রদানন করায় বৈঠকে চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। একইসাথে বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহের পথ খুলে দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা এবং যৌথ উদ্যোগে করোনার টিকা উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য চীন সরকারকে অনুরোধ জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ে এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে আরও কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন।
এছাড়া, তাজিকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরোজিদ্দিন মুহরিদ্দিনের সাথে বৈঠককালে ড. মোমেন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে একটি যৌথ কার্যনির্বাহী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহরিদ্দিন নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সাথে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বহুমাত্রিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রসঙ্গত, উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিইয়োইয়েভের উদ্যোগে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবারও ড. মোমেন সম্মেলনে অংশ নেবেন। আগামী ১৮ জুলাই প্রতিনিধি দলটি দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে।
বার্তা বিভাগ প্রধান