Home » লকডাউনেও চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা : মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

লকডাউনেও চলছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা : মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

লকডাউনেও চলছে সিলেটে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা করছেন গণসংযোগ, সভা-সমাবেশও। এতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এই অবস্থায় সিলেট-৩ আসনের তিনটি উপজেলায়ও বেড়েছে করোনার দাপট।

করোনাকে তোয়াক্কা না করেই ছুটে চলেছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। লকডাউন বাড়ালেও নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশনা না দেওয়ায় প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের কর্মী-সমর্থকরা। সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে উপ-নির্বাচন আগামী ২৮শে জুলাই। ৬ই জুলাই থেকে এ আসনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথা থাকলেও প্রার্থী অনেক আগেই থেকেই ছিলেন মাঠে।

তবে ১লা জুলাই থেকে দেশে কঠোর লকডাউন শুরু করা হলে নির্বাচন কমিশন থেকে ৮ই জুলাই পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর আরও এক সপ্তাহের লকডাউন বাড়ালেও নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। এদিকে- মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই ও প্রতীক বরাদ্দের সময়ই সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদির, সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল শুকুর সহ অন্তত ৮ জন করোনা আক্রান্ত হন। এর মধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নির্বাচনের রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন থেকে ৩রা জুলাই এক আদেশে তাদের পরিবর্তন করা হয়। নতুন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম। এছাড়া, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সিলেটের নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- দ্বিতীয় দফা লকডাউন বাড়ানো হলেও নির্বাচন কমিশন থেকে প্রচারণা বন্ধ রাখার ব্যাপারে পরবর্তী কোনো আদেশ দেয়া হয়নি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লোক সমাগম না ঘটিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না- সেদিকে নজর রাখছেন। এদিকে লকডাউনে নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক অভিযোগ তুলেছেন। ইতিমধ্যে আতিকের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

আতিকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা অভিযোগ করেছেন- ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে অভিযোগের ব্যাপারে দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে লকডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। আর এসব প্রচারণার দৃশ্য তিনি তার নিজের ফেসবুক আইডিতেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।’ উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায় এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে হাবিবুর রহমান হাবিব। গত ৮ই জুলাই শিডিউল করে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুক্রবার দিনভর তিনি বালাগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণায় সরব ছিলেন। এর আগে বৃহস্পতিবার ছিলেন ফেঞ্চুগঞ্জে। গতকাল দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নিজের বাড়ির পাশে লালাবাজারে অনেকটা শোডাউন করে হাবিব গতকাল বিকালে নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছেন। এসব নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না ভোটাররা অভিযোগ করেছেন। তারা জানিয়েছেন- ঘরোয়া পরিবেশে সভা, সমাবেশ করলেও অকিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যাচ্ছে না। একজন অন্যজনের কাছাকাছি অবস্থায় থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। প্রার্থীর সঙ্গেও গাদাগাদি অবস্থায়ও কর্মী, সমর্থকদের ফটোসেশন করা হয়। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক শাহ্‌ মুজিবুর রহমান জকন জানিয়েছেন- আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মহামারির এই সময়ে যাতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে কেউ আক্রান্ত না হন সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে মনিটরিং করছেন বলে জানান তিনি। লকডাউনে ভোটের মাঠে কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। তবে- গতকাল দুপুরের পর থেকে আতিকও নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছেন। দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় বিকালে তিনি নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণা চালিয়েছেন। সরকারের বিধি-নিষেধ মেনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য, দক্ষিণ সুরমা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব তাজউদ্দিন এপলু। তিনি জানিয়েছেন- ‘জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে প্রচারণা চলছে। তবে- জাতীয় পার্টি লোক সমাগমের চেয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যক্তি পর্যায়ে গণসংযোগ বাড়িয়েছে।

এছাড়া বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়ালিও চলছে প্রচারণা।’ লকডাউনে নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন- শফি আহমদ চৌধুরী শতভাগ বিধি-নিষেধ পালন করছেন। তিনি গণ-জমায়েত না করে নিজে নিজে গ্রামে গ্রামে মানুষের মধ্যে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি সবাইকে করোনা থেকে বাঁচতে সর্তকতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণেরও আহ্বান জানান।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *