বিষণ্ণ মন নিয়ে প্যারিসের নির্জন বাগান বাড়িতে নিজের রুমে বসে ব্যাগ গুছাচ্ছিলেন ঢাকার বাঁধন। বাংলাদেশ সময় সোমবার (৫ জুলাই), রাত ঠিক ১১টার সময় আলাপ হলো।
দেয়ালে দিকে চোখ তুলে স্থানীয় সময় জানালেন কান-খ্যাত রেহানা, প্যারিসের ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ৭টার ঘর ছুঁলো। ঠিক ১২ ঘণ্টা পর প্রিয় রুম, দেয়াল, বাগান, রান্না ঘর, ১০ দিনের ঘরবন্দি স্মৃতি আর বাড়ির পরতে পরতে লেপ্টে থাকা মায়া- সব ফেলে ফের ছুটতে হবে টিম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-সদস্যদের।
প্যারিস থেকে ৭শ’ কিলোমিটার দূরে, যেখানে লালগালিচা পেতে অপেক্ষায় রয়েছেন কান-আয়োজকরা। তার আগেই প্যারিসের বিষণ্ন সন্ধ্যায় বসলেন বাঁধন অথবা রেহানা কিংবা দু’জনেই-
নিশ্চয়ই। মায়া মানে অসম্ভব মায়া। পিছুটান বড় ভয়ংকর। সবচেয়ে বড় মায়ার জালটা তো ছিঁড়তে হলো ঢাকায়। বাচ্চাটা, বাবা আর মাকে- রেখো এতোগুলো দিন এতোটা দূরে এসে- আর তো থাকিনি। মায়া বড়ো কঠিন অসুখ। এখানে এসে এই বাড়িটাকেও কতো আপন আর নিরাপদ মনে হয়েছে। কতোগুলো দিন-রাত সাতজন মানুষ একসঙ্গে আছি। ঝগড়া, গল্প, অভিমান, উচ্ছ্বাস, উৎকণ্ঠা- সবই ছিলো এই দিনগুলোতে। এসব ফেলে আবার যেতে হচ্ছে নতুন শহরে, কান-তীরে। মায়ার তো আসলে শেষ নেই। এটাই বুঝি জীবন।
এমন না। উৎসবের নিয়ম হচ্ছে এই বিভাগে চূড়ান্ত হওয়া সকল ছবির নির্মাতা, প্রধান শিল্পী ও প্রযোজক স্বাভাবিক নিয়মেই উদ্বোধনী আসরে বিশেষ আমন্ত্রণ পায়। আমরাও পেয়েছি। কিন্তু সেটাতে আমরা অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরেকটু পরিষ্কার করে বলছি। এই না যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিন্তু টিম-সাদ এর টিম স্পিরিটের অন্যতম অংশ। আমরা শুরু থেকে এভাবেই চলছি। ভাবুন একবার, একসঙ্গে আমরা সাতজন মানুষ এলাম। এ পর্যন্ত আমাদের সবকিছু একসঙ্গে। কে ডিরেক্টর কে ডিওপি কে কতো বড় তারকা- সেটি এখানে একেবারেই বাক্সবন্দী বিষয়। কানের রীতি অনুযায়ী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিলে আমি, নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ আর প্রযোজক জেরেমি চুয়া নিতে পারি এখনও। তাহলে আমাদের সঙ্গে যারা এতোটা পথ এলেন- সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার শৈব, কালারিস্ট চিন্ময়, প্রোডাকশন ডিজাইনার উজ্জ্বল, সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন আর একজিকিউটিভ প্রোডিউসার বাবু; তাদের কী হবে! তারা হোটেলে আর আমরা লালগালিচায়, সেটিকে সাদ সমর্থন করেন না। সে জন্যই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের মধ্যে কোনও দুঃখ নেই, বরং স্বস্তি আছে। আমি তো আর বাঁধন নেই, রেহানা বলছি।
সেদিন সবাই যাবো। সেটি নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই নয়, ১৬ জুলাই আঁ সার্তে রিগার বিভাগের অ্যাওয়ার্ড ডিক্লারেশনের সময় বাংলাদেশ থেকে অডিয়েন্সে থাকবো আমরা ৮ জন। এই সাতজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে আমাদের সহ-প্রযোজক রাজীব মহাজনেরও।
বার্তা বিভাগ প্রধান