Home » সিলেটে দালালের দৌরাত্ম্য, ক্ষোভ বাড়ছে প্রবাসীদের

সিলেটে দালালের দৌরাত্ম্য, ক্ষোভ বাড়ছে প্রবাসীদের

সিলেট নগরির উপশহরে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে চলছে প্রবাসীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম। তবে কঠোর লকডাউনের মধ্যে এই নিবন্ধনেও দালালদের দৌরাত্ম্যে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।

প্রতিদিন ভোর থেকে উপশহর সি ব্লকের ৪১ নম্বর সড়কের জে’লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ভিড় করছেন প্রবাসীরা। ৩-৪ শতাধিক প্রবাসীর উপস্থিতি সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে।

টিকা নিবন্ধন করার জন্য আসা প্রবাসীদের বোকা বানিয়ে দালাল চক্র অ’তিরিক্ত ফি নিয়ে নিবন্ধনের সুযোগ করে দিতেও দেখা গেছে। এছাড়া নানা অজুহাত দেখিয়ে ২২০ টাকা বিকাশে ফি জমা নেয়ার বিপরীতে একেকজন প্রবাসীর কাছ থেকে ৩৫০-৬০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির প্রতারক ও দালালরা।

প্রথম দুদিন সার্ভা’রে সমস্যা ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের কারণে তিনদিনে মাত্র ৮৪৬ জন প্রবাসী ‘সোনার হরিণ’ ফাইজারের টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পেরেছেন।

রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে জে’লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, টিকার নিবন্ধনের জন্য একজন প্রবাসী অপরজনের সঙ্গে ঘা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছেন। আবার অনেকের মুখে মাস্কও নেই। করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময়ে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউই।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণ হিসেবে প্রবাসীরা বলছেন, এখানে ফাকা জায়গা কম। আর একটু ফাঁক থাকলে কৌশলে আরেকজন ঢুকে যাচ্ছেন তাই ঘা ঘেঁসেই দাঁড়িয়েছেন তারা।

জানা গেছে, ২ জুলাই থেকে সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহরস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন শুরু হয়েছে। রোববার ছিল চলমান এই কার্যক্রমের তৃতীয়দিন।

এই তিনদিনের মধ্যে প্রথমদিন গত শুক্রবার ২৫ জন, দ্বিতীয়দিন শনিবার ৩৬৪ ও তৃতীয়দিন রোববার ৪৫৭ জন কর্মী নিবন্ধন করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে মাঝে মাঝে সার্ভার ডাউন হয়ে যাওয়ায় নিবন্ধন কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানা গেছে। জে’লা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সিলেটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ উল আদিব এ তথ্য জানান।

প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে গমন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফাইজারের করোনার টিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার থেকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও নগরের শাহজালাল উপশহরস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে বিদেশগামীদের টিকা নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। গত তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। চলবে পরবর্তী সরকারি নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত।

জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সিলেটের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাকে আমরা সৌদি ও কুয়েত প্রবাসীদের জন্য ফাইজারের টিকার নিবন্ধন করা হচ্ছে। কারণ তাদের ভিসার মেয়াদ কম এবং দেশ দুটি ফাইজারের টিকা ছাড়া অন্য টিকা গ্রাহ্য করে না। তবে অন্যান্য বিদেশগামীদেরও নিবন্ধন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা শুধু এখান থেকে তালিকাটা করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। টিকা কবে দেয়া হবে সেটি আমরা জানি না। নিবন্ধনের সময় টিকা প্রদানের কোনো তারিখ বা স্থান বলা হচ্ছে না। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য-মন্ত্রণালয় তারিখ নির্ধারণ করে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনকারীর মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকার তারিখ ও স্থান জানিয়ে মেসেজ দেবে।

মীর কামরুল হোসেন জানান, নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে ২২৩ টাকা এবং মোবাইল মানি ট্রান্সফার (নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে দিলে ২০০ টাকা ফি প্রদান করতে হচ্ছে বিদেশগামী কর্মীদের।

এর আগে শনিবার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সিলেটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ উল আদিব জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই অনেকে বিদেশযাত্রী কর্মী করোনার টিকার নিবন্ধন করতে সিলেট জনশক্তি অফিসে আসছেন। শনিবারও ভিড় জমান কয়েকশ বিদেশগামী। রোববার চাপ আরও বাড়ে।

তবে এক সঙ্গে কয়েক জায়গায় কাজ হওয়ার কারণে মাঝে-মধ্যে সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। এ কারণে কাজে সামান্য বিঘ্ন ঘটছে। তিনি বলেন, যাদের পাসপোর্টে শুধু ভিসা লাগানো আছে তাদেরকেই নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

কাতার প্রবাসী নাজিম উদ্দিন বলেন, লকডাউনের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে শনিবার রাতে অনেক কষ্ট করে সিলেটে এসেছি। রাতে কুমারপাড়া এলাকার এক আত্মীয়ের বাসায় থেকেছি। রোববার ভোরে রিকশা নিয়ে টিকা নিবন্ধনের জন্য জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে এসেছি। সকালে আসার পরও দেখি আরও ৭০-৮০ জন চলে এসেছেন। অনেকেই নাকি রাতে অফিসের বারান্দায় ঘুমিয়েছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের অর্থনীতি মূল শক্তি হচ্ছে প্রবাসীরা। অথচ এই প্রবাসীদের নিবন্ধনের কোনো নিয়ম নেই এখানে। যারা দালাল ধরে কাজ করছেন তাদের কাজ আগে হচ্ছে। এক্ষেত্রে টাকা বেশি দেয়া লাগছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বিকাশ পেমেন্ট কিংবা যেকোনো মাধ্যমে দেয়া হোক না কেন প্রত্যেকে সরাসরি উপস্থিত থেকে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এতে অন্য কেউ কাগজ জমা দেয়া বা নেয়ার সুযোগ নাই। সচেতন অনেক প্রবাসীরা নিজে নিজেই টাকা পেমেন্ট দিচ্ছেন। এতে ভোগান্তি ও খরচ উভয় কমেছে।

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস সুত্রে জানা যায়, ২ জুলাই থেকে চালু হওয়া সিলেটসহ দেশের ৪২টি জনশক্তি অফিস, ৯টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ১টি মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অথবা আমি প্রবাসী অ্যাপে বিএমইটির এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিস জানায়, বয়স প্রমার্জন ও অগ্রাধিকার পাওয়ার লক্ষ্যে যেসব কর্মীর বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন ও স্মার্ট কার্ড নেই, অথবা চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারির পূর্বের বিএমইটির স্মার্ট কার্ড আছে সে সব কর্মীর টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের সুবিধার্থে বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ২ জুলাই থেকে বিএমইটির ডাটাবেজে নিবন্ধন করতে হবে। তবে জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত কর্মীদের নতুনভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। এ নিবন্ধন সফল হলে মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা সেন্টার ও তারিখ জানা যাবে।

এ সংক্রান্ত মেসেজ না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশগামী কর্মীদের কোনো হাসপাতাল, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি বা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে টিকাগ্রহণের সুযোগ নেই।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *