খুলনার চার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীদের সেবায় শয্যা রয়েছে ৪৩৫টি। এর মধ্যে ৩৯৬ টিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন। জেলায় করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেও চার হাসপাতালে ৩৯টি তথা ৯ শতাংশ শয্যা খালি আছে। এরপরও রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে শয্যার জন্য হাহাকার করছেন।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরেও রোগী ভর্তি করতে পারছেন না তারা। নানা অজুহাতে তাদের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হতে আসছেন, শয্যা দ্বিগুণ বাড়ালেও সামাল দেওয়া সম্ভব না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চার হাসপাতালের ৪৩৫টি শয্যার মধ্যে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রয়েছে ২০০টি, শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫টি, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৭০টি ও বেসরকারি গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২০টি শয্যা রয়েছে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, রবিবার (০৪ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত এখানে ১৯৭ জন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে রেড জোনে ১০২, ইয়োলোতে ৫৫, আইসিইউতে ২০ ও এইচডিইউতে ২০ জন রয়েছেন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন ও ছাড়পত্র নিয়েছেন ৫৫ জন। রবিবার মারা গেছেন সাত জন।
গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এখানে ১১৫ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৩ ও ছাড়পত্র নিয়েছেন ২২ জন। আইসিইউতে আট ও এইচডিইউতে ১০ জন রয়েছেন। আজ মারা গেছেন ছয় জন করোনা রোগী।
খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। পুরুষ সাত ও নারী আট জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৮ জন। মারা গেছেন দুই জন। বর্তমানে মোট রোগী ভর্তি আছেন ৬৫ জন। পুরুষ ৩৩ ও নারী ৩২ জন।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, চালু পর ৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত এখানে ২৪ জন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি আছেন। আইসিইউতে রয়েছেন ছয় জন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, যে পরিমাণ রোগী এই মুহূর্তে ভর্তির জন্য আসছেন, এতে বেড দ্বিগুণ করা হলেও সামাল দেওয়া কঠিন। গত বছর এই সময়ে দৈনিক ১০-১৫ জন আক্রান্ত রোগী এলেও এবার সেই সংখ্যাটা ৫০-৭০ জনে পৌঁছেছে।
আবু নাসের হাসপাতালের ফটকে অপেক্ষায় থাকা রোগীর স্বজন কামাল পারভেজ বলেন, আমার বাবা আলতাফ হোসেনের করোনা উপসর্গ রয়েছে। বাগেরহাট বৈটপুর এলাকা থেকে এসেছি। প্রথমে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেখানে শয্যা খালি নেই। যে কারণে এখানে এসে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা অপেক্ষা করছি। এখন শুনছি, যেসব রোগী করোনা পজিটিভ শুধুমাত্র তাদের ভর্তি করা হবে। আমার বাবার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছে। তার জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন প্রয়োজন।
এছাড়া করোনা ইউনিটে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা রোগীর স্বজন আসমা বেগম বলেন, আমরা অপেক্ষায় থাকার পর ভেতর থেকে দায়িত্বরত নার্স বলছেন, আমার স্বামীর অক্সিজেনের কোনও সমস্যা নেই। তিনি ইয়েলো জোনের রোগী, এখানে ভর্তি করা যাবে না। অথচ তার শরীর ও হার্টের সমস্যা রয়েছে। এরপরও অপেক্ষায় রয়েছি ভর্তির জন্য।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে আবু নাসের হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে আমরা শয্যা বাড়াবো।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, ১৫ বেডের একটি ইউনিটে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে হারে কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে; এতে বর্তমান ৫০ শয্যার হাসপাতালটি শুধুমাত্র কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যায় কি-না বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, প্রাথমিকভাবে ১৫ বেডের অক্সিজেন ব্যাংক ও হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা স্থাপন করা হয়। কিন্তু সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ১৫ বেডে এখন হচ্ছে না। অক্সিজেনের মজুত ও শয্যা বাড়ানোর বিষয়টি কীভাবে সমন্বয় করা যায় সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা বিভাগের হাসপাতালগুলোতে করোনা শয্যার মধ্যে খুলনার ৪৩৫ শয্যায় ৩৯৬, বাগেরহাটের ২০ শয্যায় ২৭, চুয়াডাঙ্গার ১৫০ শয্যায় ৭৫, যশোরের ১১১ শয্যায় ১২১, ঝিনাইদহের ৫০ শয্যায় ৬১, কুষ্টিয়ার ৭০ শয্যায় ২৫৯, মাগুরার ৫০ শয্যায় ৪১, মেহেরপুরের ৫২ শয্যায় ৬১, নড়াইলের ১২০ শয্যায় ৩৬ এবং সাতক্ষীরার ১৮৪ শয্যায় ২১ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রবিবার খুলনা বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে এক হাজার ৩০৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান