ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার দাম (ঊর্ধ্বসীমা) বেঁধে দেওয়া হলো। বেঁধে দেওয়া সীমায় এখন থেকে সারাদেশে এক রেটে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাবেন গ্রাহকরা। ৫ এমবিপিএস ৫০০, ১০ এমবিপিএস ৮০০ ও ২০ এমবিপিএস এক হাজার ২০০ টাকায় কিনতে পারবেন গ্রাহকরা।
দাম বেঁধে দেওয়ায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহকরা স্বস্তি অনুভব করলেও মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহকদের জন্য আপাতত কিছু নেই। অথচ দীর্ঘদিনের দাবি ইন্টারনেটের (ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট) দাম কমানো হোক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ইন্টারনেটের ‘কস্ট মডেলিংয়ের’ জন্য পরামর্শ নিয়োগ করলেও কখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক কর্মকর্তাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিটিআরসি। কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম কত হওয়া উচিত সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ফাইলবন্দি থাকে। ২০১৬ সালেও একবার কস্ট মডেলিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলো বিটিআরসি। সেটা ওই পর্যন্তই। তবে মোবাইলের ভয়েস কলের কস্ট মডেলিংয়ের বেলায় একাধিকবার উদ্যোগ নিয়ে সফলও হয় বিটিআরসি। কস্ট মডেলিং করে ভয়েস কলের মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ইন্টারনেটের বেলায় কেন যেন এই উদ্যোগ সফল হয়নি।
ব্রডব্যান্ডে দাম বেঁধে দেওয়া গেলেও মোবাইল ইন্টারনেটে কেন গেলো না- জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্রডব্যান্ড দিয়ে যাত্রা শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে আমরা সব উদ্যোগ নেব। মোবাইল ইন্টারনেটেও দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আগামীতে ভয়েস বলে কিছু থাকবে না। ডাটা (ইন্টারনেট) আগামী দিনে রাজত্ব করবে। ফলে ডাটার দিকে আমাদের নজর দিতেই হবে। ব্রডব্যান্ড দিয়ে আমরা যাত্রাটা শুরু করলাম।
ব্রডব্যান্ড দিয়েই কেন যাত্রা শুরু হলো? বেশি গ্রাহক তো মোবাইল ইন্টারনেটের- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক বর্তমানে দেশে প্রায় এক কোটি (৯৮ লাখ ৮১ হাজার) । এই সংখ্যক গ্রাহক দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ১৭ শতাংশ। কিন্তু ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকরা দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের (২,৪০৯ জিবিপিএস) ৫৮ শতাংশ ব্যবহার করে। বাকি ৪২ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় মোবাইল ইন্টারনেটে। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দেশে ১০ কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার।
ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের দিকে দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এগিয়ে থাকায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
যেভাবে ব্রডব্যান্ডের মূল্য বেঁধে দেওয়া হলো?
দাম চূড়ান্ত করার আগে বিটিআরসি গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটে মূল্য নির্ধারণের জন্য স্টেকহোল্ডার তথা সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, এনটিটিএন, আইআইজি, আইএসপির সঙ্গে আলাপ করে ব্যান্ডউইথের দাম, আইআইজির মূল্য ও আইএসপির মূল্য (মুনাফাসহ) নির্ধারণ করা হয়। এদিকে আইএসপির ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য কমিশনের গঠিত কমিটি অন্তত ৮টি পদক্ষেপ গ্রহণ করে দাম নির্ধারণের একটি অবস্থানে পৌঁছান।
ইন্টারনেটের ট্যারিফ (লাস্ট মাইল গ্রাহকের কাছে দাম কত হবে) নির্ধারণের জন্য বিটিআরসি প্রতিটি তথ্যের সত্যতা যাচাই, স্টেক-হোল্ডারদের দেওয়া কস্ট কমপোনেন্ট যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা, ট্যারিফ নির্ধারণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনটিটিএন, আইআইজির সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে ট্যারিফ নির্ধারণের জন্য আলোচনা, ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পের ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, বিটিসিএল’র ১ হাজার ২১৬টি ইউনিয়ন এবং কানেক্টেড-বাংলাদেশ প্রকল্পের ৬১৭টি ইউনিয়নে সরকারের ফাইবার অপটিক সংযোগের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা, ট্যারিফ নির্ধারণের ক্ষেত্রে শেয়ারড ব্যান্ডউইথ এবং সর্বোচ্চ কানেকশন রেশিও ১:৮ নির্ধারণ করা, সারাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের সব ইউনিয়নের জন্য ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ট্যারিফ বিবেচনা করা এবং সমগ্র বাংলাদেশে এক দেশ এক রেট ট্যারিফ প্রবর্তনের জন্য বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে।
গতি না পেলে অভিযোগ জানানো যাবে
গ্রাহক ইন্টারনেটের কোনও প্যাকেজ কিনে কাঙ্ক্ষিত গতি না পেলে অভিযোগ জানাতে পারবেন। বিটিআরসিতে অভিযোগ জানালে সংস্থাটি সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে। শুধু ঢাকা শহর নয়, প্রত্যন্ত এলাকার একজন গ্রাহকও আইএসপির দেওয়া প্রতিশ্রুত গতি না পেলে অভিযোগ জানাতে পারবেন বিটিআরসির ওয়েবসাইট বা শর্ট-কোড নম্বরে গিয়ে।
জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি বড় আইএসপি সারাদেশে এক রেটে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এই ঘোষণা দেওয়ার পরে সবাই এই সেবা দেবে। তিনি মনে করেন, ইন্টারনেটের মতো এনটিটিএন, আইআইজিসহ অন্যান্য যে কমপোনেন্ট এর সঙ্গে জড়িত, সেসব সার্ভিসেরও দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলে এই খাত টেকসই রূপ পাবে।
এই উদ্যোগে আইএসপিগুলোর লোকসান হবে নাকি মুনাফা হবে তা জানতে চাইলে আইএসপিএবির সভাপতি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের (আইএসপির) লোকসান হবে। তবে এনটিটিএন’র ট্রান্সমিশন চার্জ ও আইআইজির চার্জ কমানো হলে আমরা পরে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো। এ বিষয়ে শিগগিরই বিটিআরসিকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান