Home » যে চমক দেখাচ্ছে বিটিসিএল

যে চমক দেখাচ্ছে বিটিসিএল

টিঅ্যান্ডটি শব্দটা শুনলে এখনও চোখে ভেসে ওঠে টেবিলের ওপর রাখা ডায়ালযুক্ত ল্যান্ডফোনটার কথা। ফোন এলে ক্রিং ক্রিং শব্দ হতো। নিজের কল তো আসতোই, প্রতিবেশীকে ডেকে দেওয়ার আবদারও ছিল প্রতিদিনকার ঘটনা। শেষের দিকে মিইয়ে যেতে লাগল সেবাটি। যোগ হলো উচ্চমূল্যের ডিমান্ডনোট, সেবাপ্রাপ্তিতে অসহনীয় ভোগান্তি ইত্যাদি। সেই সুযোগে ল্যান্ডফোনের জায়গাটা দখল করে নিলো মোবাইল ফোন। মাত্র ১০ বছরে ৫ লাখের বেশি গ্রাহক হারিয়ে ধুঁকছিল বিটিসিএল (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড)। গ্রাহক নেমে গিয়েছিল ৫ লাখের নিচে। নতুন অনেক চমকপ্রদ সেবা নিয়েফের বিটিসিএলকে টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়। যার ফলে কিছুটা সুদিন ফিরেছে কোম্পানিটিতে।

গ্রাহক সংখ্যা ৫ লাখের বেশি না হলেও বাদ দেওয়া হয়েছে হাজারো নিষ্ক্রিয় গ্রাহককে। আয়বর্ধক অনেক প্রকল্পও হাতে নিয়েছেরাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিনামূল্যে টেলিফোন সংযোগ প্রদান, মাসিক বিল (ভাড়া) উঠিয়ে দিয়ে প্যাকেজ বিল অফার, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা, অর্থনৈতিক জোনে ইন্টারনেটভিত্তিক অবকাঠামো তৈরি, টাওয়ার শেয়ারিং, ওটিটি (ওভার দ্য টপ) অ্যাপ চালু ইত্যাদি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিটিসিএল এখন লাভজনক। অথচ এটি এক সময় সরকারের দুর্বলতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। প্রতিবছর বড় অংকের অর্থ লোকসান গুনতো। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি বের হতে পেরেছে।এটা সম্ভব হয়েছে গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যে পরিবর্তন দরকার ছিল বিটিসিএল-এ, সেটাই হয়েছে এবার।’

এসব বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলাপ নামে ওটিটি অ্যাপ চালু করেছি। ২৬ মার্চ চালুর পরে এখন পর্যন্ত (২৮ মে রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) ৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৪০ বার অ্যাপটি ডাউনলোড হয়েছে। এ থেকে বছরে ২০ কোটি টাকা আয় হবে। সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ সেবা বিটিসিএল-এর আয় বাড়াবে। আমরা শিগগিরই আইপি টিভিও চালু করতে যাচ্ছি।’

মন্ত্রী জানান, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিনামূল্যে গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফোনের বিল কমানো হয়েছে। ১৫০ টাকায় সারামাস বিটিসিএল টু বিটিসিএল-এ আনলিমিটেড কল করা যাচ্ছে। ডিমান্ড নোট ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে ল্যান্ডফোন।’ অনেকের কাছে বিষয়টি বিস্ময়কর বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

৫টি অর্থনৈতিক জোনে টেলিকম সেবা

দেশের ৫টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে (মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট, টেকনাফের সাবরাং ও নাফ, মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং জামালপুরে) ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে উচ্চক্ষমতার টেলিযোগাযোগ সুবিধা (ভয়েস কল, ইন্টারনেট, ডেটা ইত্যাদি) দেবে বিটিসিএল।

এই ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উচ্চগতির নিরবছিন্ন টেলিযোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এগুলো হবে ফাইভ-জি এনাবল নেটওয়ার্ক। প্রতিটি অর্থনৈতিক জোনে একটি করে টেলিকম ভবন তৈরি হবে।

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ল্যান্ডফোনে বিনামূল্যে সংযোগ দেওয়া শুরু হলে চাহিদা বাড়তে শুরু করে।ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ৩২ হাজারের বেশি।

গিগাবাইট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক (জিপন) প্রযুক্তি এবং মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক (এমটিএন)-এর মাধ্যমে বিটিসিএল ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এই দুটি প্রযুক্তিতে এখন প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের কারণে গ্রাহকদের এসব সেবার প্রতি আগ্রহ বেশি বলে বিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে।

টাওয়ার ব্যবসা

সারাদেশে বিটিসিএলের সাড়ে পাঁচ শতাধিক টাওয়ার রয়েছে। এসব টাওয়ার বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে বিটিসিএল। এটি একটি আয়বর্ধক প্রকল্প কোম্পানিটির।এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পারমিট পেয়েছে। লাইসেন্স এখনও পায়নি। তবে বিটিসিএল নতুন করে কোনও টাওয়ার নির্মাণ করতে পারবে না। বিদ্যমান টাওয়ারগুলোর সক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে।

বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সমিশনের জন্য টাওয়ারগুলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ব্যবহার করে। ভবিষ্যতে টেলিটক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব টাওয়ার ব্যবহার করতে পারবে বলে জানা গেছে।

বিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, বিটিসিএল এখন গতিশীল। এরমধ্যে ইন্টারনেট সেবা, ওটিটি, নতুন গ্রাহক উল্লেখযোগ্য। বিটিসিএল-এর গ্রাহক ৫ লাখের মতো হলেও সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা এখন বেশি।

আগে নিষ্ক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রচুর ছিল উল্লেখ করে রফিকুল মতিন বলেন, অনেক নম্বর ছিল কিন্তু গ্রাহক ছিল না। বছরের পরে বছর বিটিসিএলকে এগুলো টানতে হয়েছে। এখন নিষ্ক্রিয় নম্বরগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে আমাদের যা আয় হয় তার থেকে খরচ বাদ দিলেও টাকা থেকে যায়। কিন্তু সমস্যা করে ডেপ্রিসিয়েশন (অবচয়) খরচ। এর পরিমাণ বছরে ৪৫০ কোটি টাকা। এর প্রকৃত পরিমাণ বোঝার জন্য বিটিসিএল শিগগিরই দুটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটি আমরাদের প্রকৃত চিত্র দেখাতে পারবে। তখন অবচয়ও কমে যাবে।

তিনি আরও জানান, বিটিসিএল-এর ইন্টারনেটের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বেশি। এ খাত ভালো করছে। আমাদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি।

জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে বিটিসিএল-এর ল্যান্ডফোনের চাহিদা কমতে থাকে। ২০১৮ সালের পর গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে চার লাখ থেকে ৫ লাখের মধ্যে ওঠানামা করছিল। ২০১৮ সাল থেকে আবার বাড়তে থাকে। বর্তমানে গ্রাহক ৪ লাখ ৯০ হাজার।

বিটিসিএল বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ল্যান্ডফোন ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৭। ২০১১ সালেও সারা দেশে ১০ লাখের মতো গ্রাহক ছিল। ১০ বছরে ৫ লাখ ১০ হাজারের মতো গ্রাহক হারালেও নতুন নতুন উদ্ভাবনী সেবার কারণে আবারও গ্রাহক ফিরতে শুরু করেছে বিটিসিএল-এ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *