কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বাজেট পেশ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
শুক্রবার (৪ জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রশ্ন আসবে বাস্তবায়ন সক্ষমতার দিকে বাজেটে কী পরিবর্তন হলো। যাতে আমি ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে পারি। সেটা রাজস্ব আদায় বলি আর সরকারি ব্যয় বলি। কিন্তু ৮-৯ শতাংশ বাড়ালে মনে হয় এটা গতানুগতিক। তারপরে মূদ্রাস্ফীতি আছে এটা হয়ে যাবে। আমরা সেই জায়গা থেকে বলছি যে, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। সরকার প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বাস্তবে তার চেয়ে আরও বেশি প্রবৃদ্ধি করতে হবে। এটা করতে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা, সক্ষমতা দরকার। সেটা কিন্তু আমরা গত কয়েক বছরে দেখিনি। এই করোনাকালেও সেটা হয়ে যাবে আমরা মনে করি না। সেই দিক থেকে আমরা বলছি একটা কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে বাজেট পেশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে কাঠামোগত দুর্বলতার কথা আমরা বলছি। দুর্বলতাটা এখানে যে, সংশোধিত বাজেট ২০২১ অর্থবছরে ছিল সেটার ওপর বেসিস করে প্রবৃদ্ধিগুলো করেছেন। যেমন ২০২১ সালের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ওপর বেসিস করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করা হয়েছে। দশ মাসের হিসাবে আমরা যেটা দেখছি আমদানি, রপ্তানি, রাজস্ব সরকারি ব্যয় বাকি দুই মাসে কত পারেন সেটা যদি দেখি তাহলে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কম হবে। তাহলে প্রবৃদ্ধির মাত্রাটা আবারও ২৫-৩০ শতাংশে চলে গেলো।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরবর্তীতে দেখা যাবে যে অনুমিতিগুলো দেখে বাজেট করা হয়েছে সে অনুমিতিগুলো ঠিক ছিল না। এটা একটা দুর্বলতা। আরেকটা দুর্বলতা আমরা দেখেছি। সেটা কোভিডকালীন সময়ে ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাধিকারগুলো ঠিকই আছে। প্রথম কোভিডের পরে যে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় একটা উদ্যোগ, উদ্যম চাঞ্চল্য ছিল। সেটা এবারের বাজেটে দেখছি না। সুতরাং সামজিক নিরাপত্তা পেনশন বাদ দিলে ২ দশমিক ৪ শতাংশই আছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন নাই। কোভিড-১৯ সময়ে যে বাজেট বক্তব্যে না বললে মনে হতো চলমান বাজেটের মধ্যেই আছি। আমরা আশা করছি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আরও বিনিয়োগ আসবে। যেমন সামাজিক সুরক্ষা।
তিনি আরও বলেন, আমরা সারা বছর বললাম নতুন দরিদ্রের কথা। উপ্রান্তিক থেকে প্রান্তিক হয়ে গেছে এবং প্রান্তিক তোষ্য প্রান্তিক হয়ে গেছে। নতুন করে কর্মহীন হয়ে গেছেন। পরবর্তীতে যারা কাজ পেয়েছেন তারা অনেকেই সেবাখাত থেকে গ্রামে গেছেন। তাদের আয় কমে গেছে। সুতরাং কর্মসংস্থানে তেমন পরিবর্তন না হলেও আয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হয়েছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, বাজেট দেওয়ার কারণ হচ্ছে আয় বৈষম্য, ভোগ বৈষম্য এবং সম্পদ বৈষম্য হ্রাস করা। এটা কিন্তু বাজেট দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটা ফিলসোফিক্যাল আর্গুমেন্ট। সেই জায়গা থেকে দেখেছি কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে সহায়তা করা প্রত্যক্ষভাবে নেই। পরোক্ষভাবে এটা বলতে পারেন ব্যবসায়ীরা এটাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরা এটাও জানি এআইটি, বিএটি কমিয়ে শিল্পখাতে কর্মসংস্থান তৈরি করে সেটার মাধ্যমে কর্মসংস্থান করা যায় না। সরকার কিছু অনুমিতির উপর বাজেট প্রস্তুত করেছে। আমরা বলছি সেই অনুমিতিগুলো দুর্বল। স্বস্তির একটা জায়গা থেকে সরকার বাজেট প্রণয়ন করার সুযোগ পেয়েছিল। তার কারণ হলো অর্থনীতির সামষ্টিক যে সূচকগুলোতে (মূল্যস্ফীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, রির্জাভ, বিনিময় হার) স্বস্তির জায়গা থেকে বাজেট দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

বার্তা বিভাগ প্রধান