পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটার। এই গতিবেগ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছের সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। আগামীকাল মধ্যরাত থেকে এই ঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করতে পারে। দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত বিশেষ সতর্ক বার্তায় বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এবং এর আশপাশের এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। গভীর নিম্নচাপটি ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে এগিয়ে এসেছে। এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ছিল ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, এখন আছে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে। মোংলা বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে থাকলেও এখন তা এগিয়ে এসে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। একইভাবে পায়রা বন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার থেকে এগিয়ে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, পায়রা, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এখনও আমাদের এখানে পড়েনি। ঝড়বৃষ্টি যা হচ্ছে তা স্থানীয় মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাত থেকে এই ঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করবে। যদি না এটি গতিপথ পরিবর্তন করে। তবে এখন পর্যন্ত এই ঝড়ের গতিপথ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দিকেই আছে।’
বিশ্বের সব আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো জানায়, ২৫ মে মধ্যরাত থেকে ২৬ মে সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। আম্পান যেদিক দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করেছিল, সেই সাতক্ষীরা ও খুলনার ওপর দিয়ে সম্ভাব্য আঘাতটা হানতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়।
সর্বশেষ পূর্বাভাস মতে, মধ্য মানের এ ঘূর্ণিঝড়টি প্রবেশের সময় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তবে গতিবেগ কম হলেও ২৬ মে ভরা পূর্ণিমার ফলে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস-সহ বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন ৮ থেকে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস বয়ে যেতে পারে উপকূল দিয়ে।
বার্তা বিভাগ প্রধান