Home » প্রশাসনের পদক্ষেপ, তবু ‘অনিয়ম’ বাজারে

প্রশাসনের পদক্ষেপ, তবু ‘অনিয়ম’ বাজারে

নির্দিষ্ট সময়ের পরেও খোলা থাকছে বাজার। অবাধে, ভিড়ের মধ্যেই চলছে কেনাকাটা। পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন বাজার এলাকায় দেখা গিয়েছে এই ছবি। যদিও, কোভিড মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি ছ’টি দল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। ‘মাস্ক’ না পরলে শাস্তি হিসেবে বেশ কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা, মামলা দায়ের, ‘মাস্ক’ পরার অঙ্গীকার করানোর মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, ‘ড্রাগ টিম’ ওষুধের দোকানে গিয়ে অক্সিজেন ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম ঠিক মতো নেওয়া হচ্ছে কি না, তা দেখছে। জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কার্যালয়ে ‘ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর সেন্টার’ চালু করা হয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা একজন ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। নাগরিকদের অসুবিধার কথা জানলেই তিনি দ্রুত সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করছেন।’’ এ ছাড়া, শিল্পের জন্য কয়েকটি সংস্থার সরবরাহ করা চার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের দু’হাজারটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলিও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।

এ দিকে, জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আসানসোল জেলা হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা যথাক্রমে ৫২টি থেকে ৯০টি ও ২১টি থেকে ৮০টি করা হয়েছে। এ ছাড়া, রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মঙ্গলবার থেকে ৩০টি শয্যা চালু করা হয়েছে। দ্রুত তা বাড়িয়ে দু’শো করা হবে। সেই সঙ্গে সনকায় দু’শো ও জেলা জুড়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ২১৫ থেকে ২২৮টি শয্যা রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে জেলা জুড়ে ন’টি সেফ হোম রয়েছে। এ বার দশটি ‘কমিউনিটি আইসোলেশন সেন্টার’ তৈরি করা হবে। এই দশটি কেন্দ্র চালাতে প্রয়োজনে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

কিন্তু প্রশাসন নানা সিদ্ধান্তের কথা জানালেও জেলার বিভিন্ন বাজারে ‘অনিয়মের’ ছবিই দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকবে। কিন্তু অভিযোগ, আসানসোলের মূল বাজার, বার্নপুর, নিয়মতপুর, বরাকর, রূপনারায়ণপুরের অধিকাংশ বাজারের অনেক দোকানই নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও খোলা থাকছে। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফুটপাতের দোকানগুলি খোলা থাকছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতা, বিক্রেতা, উভয়কেই ‘মাস্ক’-ও পরতে দেখা যাচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ সেভোলে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানতেই হবে। আমরা এই বিষয়ে খোঁজ করে কড়া পদক্ষেপ করব।’’ তিনি জানান, শিল্পাঞ্চলের সমস্ত বাজারে আধিকারিকেরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে, ‘আসানসোল চেম্বার অব কমার্স’-এর সম্পাদক শম্ভুনাথ ঝা বলেন, ‘‘আমরাও সচেতনতা প্রচার করছি। কিন্তু তবুও কয়েক জনের হুঁশ ফিরছে না।’’ ‘নিয়ামতপুর মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স’-এর সম্পাদক শচীন ভালোটিয়া বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সংগঠনও পথে নামবে।’’ ঘটনাচক্রে, নির্ধারিত সময়ের পরেও দোকান খোলা রাখায় মঙ্গলবার দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে পুলিশ ১৫ জন দোকান মালিককে আটক করে। করোনার সংক্রমণ রুখতে মে মাসের প্রথম তিন দিন বাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’। মঙ্গলবার খোলে বেনাচিতি বাজার।

এ দিকে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাজি জানান, জেলায় দৈনিক সংক্রমণের হার ৪৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। সুস্থতার হার, ৮৬ শতাংশ। তাঁর দাবি, ‘‘এ পর্যন্ত জেলায় দু’লক্ষ ৯০ হাজার জনের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আড়াই হাজার টিকা মজুত আছে। এর পরে সংশ্লিষ্ট দফতর টিকা না পাঠালে আর তা দেওয়া যাবে না। অক্সিজেন নিয়ে কোনও সমস্যা এ পর্যন্ত নেই।’’

তবে নাগরিক সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান কোভিড ম্যানেজমেন্ট দলের কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু এবং ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যালের বক্তব্য, ‘‘আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি। প্রশাসনের শত চেষ্টাতেও নাগরিক সচেতনতা আশানুরূপ বাড়েনি। ফলে, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের এ বার আরও কঠিন পদক্ষেপ করার সময় এসেছে।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *