Home » বিশ্বনাথে সুমেল হত্যাকান্ডে শোকের ছায়া

বিশ্বনাথে সুমেল হত্যাকান্ডে শোকের ছায়া

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সাইফুল এখন মুর্তিমান এক আতংকের নাম। তার কর্মকান্ডে দেশ-বিদেশে যেন আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হলেও বেশি দিন সেখানে থাকে না। অবৈধ ভাবে টাকার পাহাড় গড়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এলাকায় রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে। ভূয়া মৎসজীবি সমিতি গঠন করে চাউলধনী হাওর লীজ নিয়ে এলাকার কৃষক সমাজের উপর অত্যাচার নির্যাতনের কাহিনী অনেক দিনের। সে একটি নিজস্ব বাহিনী গঠন করেছে। টাকা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করতে পারে সে। এলাকাবাসী তার অত্যাচারে অতিষ্ট। কেউ কোন টু শব্দ করলেই বন্ধুক হাতে নিয়ে ভয় দেখাত। গ্রামবাসীকে হুমকি দিয়ে বলত, খুন এখন স্বাভাবিক বিষয়। টাকা দিয়ে আইন কেনা যায়। আমার টাকা খায় না এমন কোন লোক আছে ? সে একজন মন্ত্রী ও দুইজন সচিবের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় দাপট দেখাত। সচিবরা নাকি যুক্তরাজ্যে গেলে তার বাসায় থাকা-খাওয়া করতেন এবং উপ টোকনও নিতেন। এই হলো তার ক্ষমতা ও সাহসের দাপট। এসব নিয়ে এখন বিশ্বনাথে সর্বত্র আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।
গত ১লা মে চাউলধনী হাওরের দক্ষিণ পাড়ে চৈতননগর এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় নতুন করে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আগে তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা না বললেও এখন সবাই মূখ খুলতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সূত্রসহ স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করে বলেছেন, ১লা মে শনিবার ঘটনার পূর্বে প্রায় ৮/১০দিন ধরে সাইফুল সন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থানায় বসে থাকতো। সাধারণ মানুষ কোন কাজ নিয়ে গেলেই তার গল্প গুজবের কারনে পুলিশের সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যেত না। গ্রামবাসীর অভিযোগ মাটি কাটার ব্যাপারে কেউ বাধা আপত্তি করলে পুলিশ যেন সাথে সাথে তাকে সহায়তা করে, এমন রফাদফার পর নিশ্চয়তা পেয়েই সে কৃষক নজির ও মানিকের ভূমিতে জোরপূর্বক মাটি কাটা শুরু করে। গুলিবর্ষণের ঘটনার পর সাইফুলই থানায় ফোন করে ঘটনার স্থলে পুলিশ নিয়ে যায়। সে বলেছে প্রতিপক্ষের লোকজন নাকি তার লোকের উপর গুলিবর্ষণ করেছে। বিশ্বনাথ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইফুলের সাথে কথাবার্তা বলে তাকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার গুরুত্ব অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের সাথে সাইফুলকে দেখে এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এই সুযোগে সাইফুল ও তার বাহিনী পাশ্ববর্তী থানার একটি গ্রামে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনারস্থলে গেলে এমন ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যেক্ষদর্শীরা। এমনকি স্কুল ছাত্র সুমেলের চাচা নজির মিয়াও এমন অভিযোগ করেন। সাইফুল পালিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় জনতা চারজনকে ঘেরাও করে রাখে এবং এই চারজনকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। সাইফুল পাশ্ববর্তী একটি থানার একটি গ্রামের অবস্থান করে মোবাইল ফোনে ঘটনার সাথে জড়িত নয় মর্মেও সাংবাদিকদের নিকট বক্তব্য দেয়।
চৈতননগর গ্রামের কৃষক দয়াল হত্যা মামলার প্রধান আসামী হলেও সাইফুল থানায় আসা-যাওয়া করতো। তার নামীয় গেঞ্জি পড়ে উপজেলা প্রশাসন র‌্যালি করার সচিত্র প্রতিবেদনও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের সাথে সংখ্যতা গড়ে তুলে তার ক্ষমতার দাপট বেড়ে যায়। অবশেষে নিষ্টুর ভাবে সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বন্ধুক, পিস্তল দিয়ে গুলি করে নিরীহ গ্রামবাসীকে আহত করার মর্মান্তিক ঘটনায় সমগ্র উপজেলায় নিন্দার ঝড় বইছে। নিহত সুমেলের পিতা আব্দুল মানিকের অবস্থাও গুরুত্বর। তিনি ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন এবং ইতিমধ্যে কয়েকবার বমিও করেছেন। তার মাথায় কয়েকটি গুলিও রয়েছে।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন ও চৈতননগর গ্রামের আফজল হোসেন জানান, আহতদের নিয়ে তারা হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক করুণ কাহিনী লক্ষ্য করলেন। গুলিবিদ্ধ পিতা আব্দুল মালিক জখমীপুত্র সুমেলকে বুকে নিয়ে বাচাঁ বার জন্য বারবার সকলের প্রতি কাকুতি মিনতি করছেন। তাদের বহণকারী গাড়ীটি ওসমানী হাসপাতালের গেইটের ভিতর প্রবেশ করা মাত্রই পিতার বুকের উপরই পুত্রের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন মেম্বার অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং তাকে বেসরকারী একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
শনিবার রাত প্রায় ৮টার সময় সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আহমদ ঘটনারস্থল পরিদর্শন করে খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস্ দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
সৌদিআরব প্রবাসী নূর আছকির ফেইসবুক লাইভে এক বার্তায় এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে খুনি সাইফুল ও তার সহযোগিদের গ্রেফতারের দাবী জানান। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য যে, শনিবার বিকাল অনুমান ৩টায় চৈতননগর গ্রামে নজির ও মানিকের ক্ষেতের জমিতে জোরপূর্বক ভাবে সাইফুল ও তার বাহিনী মাটি কাটতে গেলে বাধা দেয়ার কারনে বন্ধুক, পিস্তল ও দেশি অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ভূমি মালিকদের উপর হামলা করে সাইফুল ও তার বাহিনী। এতে প্রায় ১০জন আহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন স্কুল ছাত্র নিহত সুমেল, তার পিতা আব্দুল মালিক, চাচা মনির উদ্দিন। অন্যদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *