মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমানের বাড়িতে গুলি বর্ষণ করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে ওই যুবলীগ নেতার বাবা-মাসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এসময় প্রতিপক্ষরা অন্তত অর্ধ-শতাধিক গুলি ছোড়েছে। গত (২৯ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার এওচিয়ায় ইউনিয়নের ভুত পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযাগে পুলিশ তাহসিন আরফাত জিহান (২০) নামের একজনক আটক করেছে। গুলিবিদ্ধরা হলনে- মাহাবুবুল আলম (৬০), মমতাজ বেগম (৫০) ও মোঃ ঈসমাইল (২৯)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মোঃ আবু ছালেহের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে ইতিপূর্বে একাধিক বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত বুধবার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী আবু বক্কর, মোঃ তৌহিদ, মোঃ আরিফ, মোঃ মানিক প্রকাশ কালা মানিক ও মোঃ মানিক প্রকাশ ছোট মানিকের নেতৃত্বে ১২-১৪ জনের দল ভুত পাড়ায় গিয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমানকে খুঁজে না পেয়ে তার ছোট ভাই রেজাউল করিমকে মারধর ও তার দোকানের মালামাল তছনছ করে চলে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবলীগ নেতা মিজান তার ভাইকে মারধর ও দোকানের মালামাল নষ্ট করার ঘটনায় অংশ নেয়া নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী কয়কজনের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদেরকে বকাবকি এবং দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে আসে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে গুলি বর্ষণ করে। এতে মিজানের বাবা মাহাবুবুল আলম, মা মমতাজ বেগম ও চাচাত ভাই মোঃ ঈসমাইল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যাওয়ার পর গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস চন্দ্র মিত্র জানান, যুবলীগ নেতা মিজানের বাড়িতে গুলি বর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে ভোরে অভিযান চালানা হয়। এসময় তাহসিন আরাফাত জিহান নামের একজনকে আটক করা হয়।
এওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আবু ছালেহের পক্ষ থাকায় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে আমি এবং আমার চাচাতো ভাই ঈসমাইল বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়ায়। এসময় পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক, ইউপি সদস্য আবু তাহের, বক্কর, পারভেজ, তৌহিদ ও আরিফসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন আমি দৌঁড়ে পালাতে পারলেও চাচাতো ভাই ঈসমাইল গুলিবিদ্ধ হয়। আমাকে না পেয়ে তারা আমার বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এসময় বাড়ির সিঁড়ির বেলকনিতে দাঁড়ানো আমার বাবা-মা গুলিবিদ্ধ হয়। আমার বসত ঘরে লক্ষ্য করে তারা অর্ধ-শতাধিক গুলি চালায়। পরে এলাকার লোকজন সংঘটিত হয়ে ধাওয়া করলে তারা ২টি গাড়ি যোগে পালিয়ে যায়।
এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক সাংবাদিকদের জানান, মিজানের সােথ আমার কোন ধরনের দ্বন্দ্ব নাই। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। কে বা কারা তার বাড়িতে গুলি করছ বলে খবর পেয়ে আমি ওসি সাহবকে ফোন দিছিলাম। আমি উনাকে ঘটনার বিষয়ে বলছি। আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছি। আর মোবাইলের কললিষ্ট ট্রেক করলে বুঝতে পারবে এ ঘটনার সাথে আমার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিযাধীন রয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক