Home » ভাবের ঘরে

ভাবের ঘরে

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব গত ২৪ মার্চ সমস্ত রাজ্যকে চিঠি দিয়া জানাইলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নির্ধারিত কোভিড-বিমার মেয়াদ ফুরাইয়াছে, সরকার আর তাহা বাড়াইবে না। গত বৎসর মার্চে লকডাউন চালু হইবার পর চিকিৎসক, নার্স-সহ কোভিড-মোকাবিলায় প্রথম সারিতে থাকা সকল স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমা ঘোষণা করিয়াছিল কেন্দ্রীয় সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রী করোনা-যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের আহ্বান জানাইয়াছিলেন, হেলিকপ্টার হইতে হাসপাতালে পুষ্পবৃষ্টিও হইয়াছিল। এখন বিমা বন্ধের খবর আসিতে, স্বাস্থ্যসচিবের চিঠি সংবাদমাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িতে যখন বিরোধী দলের নেতা প্রতিবাদ করিলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষোভ ও হতাশা চাপা থাকিল না, তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রক তড়িঘড়ি টুইট করিল, কেন্দ্রীয় সরকার নূতন বিমা প্রকল্প চালু করিবার কথা ভাবিতেছে। স্বাস্থ্যসচিবের চিঠিতে কিন্তু তাহার উল্লেখমাত্রও ছিল না। সারা দেশে সকল স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-টিকা পাইয়াছেন, তাহার উল্লেখ ছিল। টিকা মিলিয়াছে অতএব বিমার দরকার নাই, ইঙ্গিত এমনই।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠিয়াছে, ইহা কেন্দ্রের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টা— স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রকাশ হইয়া পড়িল বলিয়া নূতন বিমার কথা তুলিয়া কুলরক্ষার প্রয়াস কি না। কিন্তু তাহা অপেক্ষাও বড় প্রশ্ন উঠিয়াছে বিমা বন্ধের সিদ্ধান্ত ও বিশেষত সময় লইয়া। কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গে যখন দেশ ডুবিতেছে, তাহার প্রথম ও প্রধান অভিঘাতটিই সহ্য করিতে হইতেছে চিকিৎসক, নার্স, নিকাশি কর্মী, আশা কর্মী-সহ দেশের সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে, ঠিক তখনই তাঁহাদের বিমা বন্ধ করিবার অর্থ কী? নিজেদের জীবনের ঝুঁকি লইয়া দেশের করোনা-আক্রান্ত কোটি কোটি রোগীকে নিরন্তর চিকিৎসা ও সেবা দিয়া কার্যত যুদ্ধ করিতেছেন যাঁহারা, স্বাস্থ্যবিমা তাঁহাদের ও তাঁহাদের পরিবারের জন্য একাধারে আর্থিক ও মানসিক ভরসাস্থল হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। ঠিক এক বৎসরের মাথায়, করোনার প্রবলতর প্রকোপের মধ্যে তাহা বন্ধ করা এক চরম অমানবিক আঘাত।

মনে রাখা দরকার, এই বিমা শুরু হইতেই নির্বিঘ্ন ছিল না, এক বৎসরের মধ্যে দুই বার তাহার মেয়াদ বর্ধিত হইয়াছে। এখনও পর্যন্ত বিমার সুবিধা হাতে পাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবারের সংখ্যা মাত্র ২৮৭, যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রদত্ত ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য, ২ ফেব্রুয়ারি অবধি কোভিডে প্রাণ গিয়াছে ১৬২ জন ডাক্তার-সহ মোট ৪৮৯ জন স্বাস্থ্যকর্মীর। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে এই সংখ্যাও সত্য নহে, কোভিডে মৃত চিকিৎসকের সংখ্যাই অন্তত ৭৪৪। অভিযোগ, করোনা রুখিতে প্রাণপাত করিতেছেন যাঁহারা, তাঁহাদেরই মৃত্যু সংক্রান্ত ঠিক তথ্য দিতেছে না কেন্দ্রীয় সরকার। সকলে বিমাও পান নাই, এই অবস্থায় বিমা বন্ধের ঘোষণা হইল, আবার নূতন বিমার আশ্বাসও। পুরা প্রক্রিয়াটিই যে আগাগোড়া নিতান্ত অস্বচ্ছ, বুঝিতে বেগ পাইতে হয় না। নূতন বিমা কবে হইতে কার্যকর হইবে, তাহাতেও ৫০ লক্ষ টাকা নিশ্চিত হইবে কি না, যদি তাহাই হয় তবে পুরাতন প্রকল্পের মেয়াদই কেন বর্ধিত হইল না, পুরাতন প্রকল্প বন্ধ করিবার আগে কেন নূতন প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি হইল না— প্রশ্ন অনেক। উত্তর নাই। ভাবের ঘরে চুরি থাকিলে উত্তর মিলিবে কী করিয়া।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *