Home » নাইক্ষ্যংছড়ির ছড়াখাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র

নাইক্ষ্যংছড়ির ছড়াখাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র

মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, কাগজি খোলা থেকে ফিরে:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা ও লামা উপজেলার ফাসিঁয়াখালী ইউনিয়নের লাইল্লামার পাড়ার মাঝ খানে দুই উপজেলার সীমানায় খুটাখালীর ছড়াখাল। ঐ ছড়াখাল থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। বালু খেকোরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত প্রকাশ্যে অবাধে বালু উত্তোলন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে বাঁধ, ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে।

অপরদিকে ঐ ছড়াখালে বালুদূস্যরা মাঠির বাঁধদিয়ে খালে গতি পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ির বিশাল একটি অংশ লামা উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানচিত্র। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাইশারী ইউনিয়নের কাগজি খোলা গ্রামের আব্দু শুক্কুর,আমির মোহাম্মদ বাদি হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি বলে সাংবাদিকদের জানান। তাই তারা অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাইল্লামার পাড়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শফিউল আলম পুতুসহ তারা ৫ ভাই মিলে খুটাখালী এলাকার ডাক্তার আজিজ এর নেতৃত্বে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কাগজি খোলা খুড়াখালী ছড়াখালের কয়েকটি স্থানে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তুলছেন। শুধু তাই নয়, নদীর তীর থেকে এক্সভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে আশপাশের ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছেন। এতে নদীর তীরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেকোনও সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঐ এলাকার মোঃ ইউনুছ প্রকাশ কেড়া ইউনুছসহ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী মাটি ও বালু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ সত্ত্বেও বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও তারা দিন-রাত ট্রাকে ট্রাকে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।

তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। সম্প্রতি দুই একবার স্থানীয় কাগজি খোলা পুলিশ এই অবৈধ বালু উত্তোলনের মেশিন জব্দ করা হলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’এক বছরের মধ্যে নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদীগর্ভে বিলীন হবে।

এ প্রসঙ্গে বালু উত্তোলনকারী শফিউল আলম পুতু জানান, নদী তীরবর্তী ব্যক্তির মালিকানাধীন জায়গা কিনে সেখান থেকে বালু ও মাটি বিক্রি করছেন তিনি। অপর বালু উত্তোলনকারীর প্রধান ডাক্তার আজিজকে মুঠোফোনে না পেয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।

তবে স্থনীয়রা জানান, তারা ৪টি জায়গায় বোরিং করে বালু উত্তোলন করেন। বর্তমানে তা চলমান রয়েছে। দুই উপজেলার সীমান্তের এ ছড়াখালের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মেশিনে বালু উত্তোলন হচ্ছে। কারা, কীভাবে কাকে ম্যানেজ করে এই বালু উত্তোলন করছে তা স্থানীয়দের জানা নেই।

এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি দ্রুত বালু উত্তোলনের পয়েন্টে এসিলেন্টকে পাঠানো কথা জানান।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *