ভারতে এ মুহূর্তে করোনার তিনটি ভ্যারিয়েন্ট (B.1.617, B.1.617+S:V382L এবং B.1.618) নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মারুফুর রহমান অপু বলেন, ‘B.1.618, এটাকে বলা হচ্ছে বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট। কারণ এটা এখন পশ্চিমবঙ্গে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটা কিন্তু ট্রিপল মিউটেন্ট না, অনেকে ভুল করে এটাকেই ট্রিপল মিউটেন্ট বলছেন। এই ভ্যারিয়েন্টে E484K, Y145del, H146del এই তিনটি মিউটেশন অব কনসার্ন আছে। যেগুলোতে ইমিউন এসকেপ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়া, বেশি ইনফেক্টিভিটি (সংক্রমণ) এসবের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে E484K সাউথ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টে আছে, E484Q ইউকে ভ্যারিয়েন্টে আছে, L452R ক্যালিফোর্নিয়া ভ্যারিয়েন্টে আছে। বাংলাদেশে গত তিন মাসে করা অনেকগুলো জিনোম সিকোয়েন্সের মাঝে ১৭২টি স্যাম্পলে E484K এবং ১০টি স্যাম্পলে Y145del মিউটেশন পাওয়া গেছে।’
তবে এই সংখ্যাগুলো ন্যাশনালি রিপ্রেজেন্টেটিভ না এবং ভারতের গবেষকেরাও বলছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রবণতা বা রোগের তীব্রতা সৃষ্টির প্রবণতা নিয়ে বলার মতো তথ্য এখনো অজানা। এই তথ্য জানিয়ে ডা.মারুফুর রহমান বলেন, এছাড়াও এই ভ্যারিয়েবট বা ডাবল/ট্রিপল মিউটেন্ট ভ্যারিয়েন্ট ভারতে বেশি মৃত্যুর জন্য দায়ী কিনা এটাও বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ এখনও হাতে নেই। তাই বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে নতুনভাবে আমাদের ভয়ের কিছু নেই যেখানে ইতোমধ্যে সাউথ আফ্রিকা ও অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে দেশে এইসব মিউটেন্ট ভাইরাস এদেশে বিরাজ করছে। বলেন ডা. মারুফুর রহমান।
বাংলাদেশে এখনও এই ভ্যারিয়েন্ট রিপোর্টেড হয়েছে বলে জানা যায়নি। কিন্তু যদি চলে আসে তবে সেটা বাংলাদেশের জন্য কী পরিমাণ ঝুঁকির কারণ হবে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং কোভিড ১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে যদি চলেই আসে তবে তা আমাদের জন্য অনেক ঝুঁকির হবে, আর এটা যে আসবেই তা সহজে ধরে নেওয়া যায়। ভারত থেকে আসা যাত্রীদের সর্বোচ্চ কোয়ারেন্টিনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ করেছে। কিন্তু আমরা সেটাও করতে ব্যর্থ হয়েছি।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ভারতের এই ভাইরাস আমাদের দেশে ছড়ানোর সমূহ আশঙ্কা আছে। একে তো আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তারওপর স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করছে।
ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ একদম বন্ধ করা সম্ভব নয় বিভিন্ন কারণে। আর এ কারণে এই ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান।
তিনি বলেন, বন্দরগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করা উচিত। এতে ২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানা যাবে। কোয়ারেন্টিনও সেরা উপায়। কিন্তু যদি সেটা সম্ভব না হয়, তবে পরীক্ষা করিয়ে দেশে ঢোকাতে হবে। এতে অন্তত ৯০ শতাংশ শনাক্ত করা যাবে।’
বার্তা বিভাগ প্রধান