পুরান ঢাকার আরমানিটোলা হাজী মুসা ম্যানশনের কেমিক্যাল গোডাউন থেকে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত এক নারীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২০ জন। তাদের মধ্যে চার জন আইসিইউতে রয়েছেন। ১৬ জন রয়েছেন সাধারণ বেডে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মধ্যে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়ার পর আহত কয়েকজনকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আগুনে মারা যাওয়া চার জন হলেন—ভবনের কেয়ারটেকার রাসেল মিয়া, ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, হাজী ম্যানশনের সিকিউরিটি গার্ড ওলিউল্লাহ ব্যাপারী এবং তার আত্মীয় কবির। আগুনের তীব্রতায় বাইরে বের হতে পারেনি রাসেল চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ছেলে রাসেল মিয়া আট বছর ধরে হাজী মুসা ম্যানশনের কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত। ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন তিনি। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমাতে গেলে ভোরে আগুন লাগে ওই ভবনে। আগুনের তীব্রতায় তিনি বাইরে বের হতে পারেনি। পরে আগুনে দগ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তারা বলেন, হাজী মুসা ম্যানশনে আগুন লেগেছে বলে আমরা সকালে সংবাদ পাই। এর পর পরই ঘটনাস্থলে আসি। আমরা শুনতে পাই, আগুনের তীব্রতায় রাসেল বাইরে বের হতে পারেনি। ভিতরেই দগ্ধ হয়ে মারা যায় সে।
তারা বলেন, আমরা সবাই ঢাকায় কাজ করি। রাসেলের দুই মেয়ে। এক জনের তিন আরেকটির বয়স দুই বছর। আগুনের খবর পেয়ে চাঁদপুরে থাকা তার স্ত্রী বারবার ফোন দিচ্ছে। কী বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না, কী সান্ত্বনা দেবো তাকে। নিহত রাসেলের বাবা চাঁদপুরে একটি টোং দোকান চালান।
ভবনের বাসিন্দারা বলেন, আগুন লাগার পর গার্ড রাসেল তিন তলায় এসে আমাদের ঘুম থেকে ওঠান। দরজা নক করে বলে আগুন লেগেছে আপনারা ছাদে যান। একথা বলে সে আবার নিচে চলে যায়। পরে জানতে পারি তার মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
তারা জানান, দহ্য পদার্থ থাকায় আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের পাশাপাশি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো ভবন।
হাজী মুসা ম্যানশনের চার তলায় থাকতেন ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন তিনি। ধোঁয়ার কারণে অচেতন হয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাজী মুসা ম্যানশনের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ওলিউল্লাহ ব্যাপারী। ভবনের লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। কয়েকদিন আগে তার কাছ আসে এক আত্মীয় কবির। শুক্রবার ভোরে লাগা আগুনে তিনিও মারা যান।
বার্তা বিভাগ প্রধান