বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে নির্মানাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শ্রমিক-পুলিশ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গণ্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে চৌকস পুলিশ এসআই আরিফুল ইসলাম পূনঃ যোগদানে আস্তার বাতাস বইছে জনমনে। নিভৃত পল্লী গণ্ডামারায় ফিরে এসেছে স্বস্তি।
সময়ে সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তা মানুষ ভুলে যায়। দু-একজনের অপকর্মে পুরো পুলিশ বাহিনীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করে মানুষ। তবে পুলিশ বিভাগে মানবিক পুলিশ কর্মকর্তাদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক কর্মকান্ডে রয়েছে হাজারো সুনামের দৃষ্টান্ত। করোনা মহামারীর শুরু থেকে আজ অবধি সমগ্র বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকান্ড সব জায়গায় প্রশংসার জয়গান গেয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। এমন এক ধরনের এক মহান নানান বিধ চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে এসআই আরিফুল ইসলামের। এ ধরনের পুলিশ অফিসারের কার্যক্রমে পুরো পুলিশ বাহিনীকে করছে প্রশংসিত।
২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর আরিফুল ইসলাম বাঁশখালী থানায় যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১০ই অক্টোবর গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১৮ মাস দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে বদলি করা হয় আনোয়ারা রাঙ্গাদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে। এই সু-দীর্ঘকাল গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনকালীন প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এলাকায় চুরি-সন্ত্রাস দমনে অন্যন্যা ভুমিকা রেখেছিলেন চৌকস এই পুলিশ অফিসার আরিফুল ইসলাম।
জানা যায়, এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের পরম বন্ধু হিসাবে পরিচিত মুখ আরিফুল ইসলাম তার দায়িত্বের বাইরে অনেক মানবিক গুনাবলি চরিত্রের বহি:প্রকাশও ঘটিয়েছেন। পাওয়ার প্ল্যান্টে শ্রমিকদের কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ছুটে গিয়ে নিমিষেই সমাধান করে দিতেন নিজ উদ্যোগে। লকডাউনের সময় পাওয়ার প্ল্যান্টে নানা অসঙ্গতি কর্তৃপক্ষের সাথে বসে সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জানতাম পুলিশ মানুষের কাছ থেকে শুধু টাকা নেয়।হয়রানি করে! কিন্তু আরিফ স্যার কি পুলিশ না ফেরেস্তা! তা আমি জানিনা। তবে আমার আমার দেখা সেরা অন্য এক মানবিক মানুষ মানুষ আরিফ স্যার।’
এভাবে বলতে বলতে এক পর্যায়ে হঠাৎ কান্না জড়িত কন্ঠে জসিম বলেন,’আমার সংসারে অভাব ছিল ভালো একটি পোষাক ও ছিলনা। একদিন আরিফ স্যারের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি আমার অভাবের কথা বলতেই কিছু টাকা দেওয়ার পাশাপাশি পোষাকও কিনে দেন। পরে এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকুরীও দেন। এরকম অসংখ্য মানুষের পরম বন্ধু ছিল আরিফ স্যার।’
বলতে ততক্ষণে তার চোখের কোনায় জল টলমল করছিল।
স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল হক রাশেদী বলেন, ‘আমার জীবনে অনেক পুলিশ অফিসার দেখেছি। এরকম মানবিক ও জনদরদী পুলিশ অফিসার এই এলাকায় কম দেখেছি। যার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রজ্ঞাময় মেধা ও পরিশ্রমে দীর্ঘ ১৮ মাস এই জনপদের বাসিন্দা সহ এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের হাজার হাজার শ্রমিকের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় এই এলাকা ও এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের শ্রমিকদের মাঝে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি। পুনরায় এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে পুলিশ ফাঁড়িতে তার যোগদানের খবরে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার বাতাস বইছে।’
এলাকার দোকানপাট রাস্তাঘাটে চায়ের চুমুকে তার অতীত কর্মকান্ডের আলোচনা চলছে। অনেকেই মন্তব্য করছে ১৭ তারিখ এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে যে ঘটনা ঘটেছে, সে সময়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হিসেবে আরিফুল ইসলাম থাকলে এ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ৭টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যেতো না। এলাকার প্রত্যেকটি আবাল বৃদ্ধা বনিতার সাথে তার বন্ধুসুলভ সস্পর্ক ছিল। গত ১৭ এপ্রিলের ঘটনায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি পুলিশের পক্ষ থেকে অপরটি এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষের থেকে। পুলিশের করা মামলায় অজ্ঞতানামা আড়াই হাজার ও এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষের করা মামলায় ২২ জনের নাম দেখিয়ে ১০৫০ জনকে অজ্ঞতানামা আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এই নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
সদ্য দায়িত্ব নিয়োজিত গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে এসআই মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের কাছ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। ঘটনার পর পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বেশ কিছু জিনিস লুটপাট হয়েছে এসব মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
নির্বাহী সম্পাদক