Home » মন্বন্তরের নাটকে মন ভুলিয়েছিলেন, বিস্মৃতির আড়ালে বিখ্যাত বাঙালি অভিনেত্রী

মন্বন্তরের নাটকে মন ভুলিয়েছিলেন, বিস্মৃতির আড়ালে বিখ্যাত বাঙালি অভিনেত্রী

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় :

উদয়শংকরের পাশাপাশি ব্যালে উপস্থাপন করে তিনি সাড়া ফেলেছিলেন। ‘মীনাক্ষি’র মতো হিন্দি ছবিতে তিনি ছিলেন মুখ্য চরিত্রে। নৃত্যকলার মাধ্যমে ৭৬-এর মন্বন্তরের মতো সমকালীন বিষয় নিয়ে ‘ভুখ’ নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। তিনি সাধনা বসু।

ব্রক্ষ্মানন্দ কেশব সেনের পুত্র ব্যারিস্টার সরল চন্দ্র সেন ও তার পত্নী নির্মলা সেন-এর তিন কন্যার মধ্যমা সাধনার জন্ম ২০ শে এপ্রিল, ১৯১৪। সাধনার শিক্ষার সূচনা হয় তারই পিতামহের প্রতিষ্ঠিত ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে; পরে লোরেটো কনভেন্টে ভর্তি হন। শৈশবেই মায়ের অনুপ্রেরণায় তিন বোন বিষানী নামে একটি নাচ-গানের দল গড়ে তোলেন।

খুবই কম বয়সে সাধনা মধু বসুর প্রতিষ্ঠিত কলকাতা আর্ট প্লেয়ার নামক থিয়েটার-গোষ্ঠীতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের সাহায্যকল্পে এমপায়ার থিয়েটারে কলকাতা আর্ট প্লেয়ার প্রযোজিত ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ-এর আলিবাবা নাটকে গৌণ ভূমিকায় অভিনয় করেন। মধু বসু পরিচালিত দালিয়া নাটকে (১৯৩০) তার প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয়। সেই বছরেরই ১৫ই ডিসেম্বর মধু বসুর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। ১৯৩৪ সালে আলিবাবা নাটকের পুনরাভিনয়ে মুখ্য ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেন। এই নাটকটিরই চলচ্চিত্র রূপ দেন মধু বসু ১৯৩৭ সালে যার প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সাধনা। ভারতলক্ষী স্টুডিও প্রযোজিত বাণিজ্য সফল এই ছবিটিকে আজও দর্শক মনে রেখেছেন।

মঞ্চ ও চলচ্চিত্র, উভয় মাধ্যমেই সাধনা বসুর প্রধান পরিচয় নর্তকী হিসাবে। শৈশবকাল থেকে নাচ শিখেছেন গুরু তারানাথ বাগচি (কথ্থক), সেনারিক রাজকুমার (মণিপুরী) ইত্যাদিদের থেকে; গান-বাজনা শিখেছেন ওস্তাদ ইনায়েত্ খাঁ, তিমির বরণ এবং শচীন দেব বর্মণের কাছে; পিয়ানো শিখেছেন ফ্রাংকো পোলোর কাছে। নবজাগ্রত ধ্রুপদী নাচগুলির বিভিন্ন শৈলীগুলিকে একত্রিত করে ব্যালের অনুপ্রেরণায় তিনি যে আধুনিক ডান্স ফর্মের জন্ম দেন, তার অসামান্য উদাহরণ ভুখ, ওমর খৈয়াম ইত্যাদি নাটিকা। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে নাচকে একটি সম্মাননীয় আর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে সাধনা বসুর অবদান অনস্বীকার্য।

আলিবাবা ছবিটির বাণিজ্যিক সাফল্যের পরে মধু বসু-সাধনা বসু জুটি একাধিক সফল বাংলা ও দ্বিভাষিক (বাংলা ও হিন্দি) ছবি উপহার দেন। এই সব ছবির মধ্যে অভিনয় (১৯৩৮), কুমকুম (১৯৪০), রাজনর্তকী (১৯৪২) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রাজনর্তকী ছবিটির একটি ইংরাজী সংস্করণ দা কোর্ট ডান্সার নামে মুক্তি পায়। সাধনা বসু অভিনীত শেষ ছবি বিক্রমোর্বশী (১৯৫৪)| মধু বসু ছাড়াও হিন্দি ভাষায় তিনি চতুর্ভুজ যোশী, কেদার শর্মা প্রভৃতি পরিচালকদের সাথে কাজ করেন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *