‘নানা ভাষা নানা মত, বিবিধের মাঝে আছে দেখো মিলনও মহান’… মিলন তো অবশ্যই আছে। আর তাইতো সারা বছরই কোনও না কোনও সামাজিক হোক কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান মেতে ওঠেন আসমুদ্র হিমাচলবাসী।
আর এই সামাজিক অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানই মুছে ফেলে গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস। আরও কাছাকাছি আনে মানুষকে। তৈরি হয় সসম্প্রীতির ভারত। ঠিক যেমন প্রতিবছর চৈত্রের শেষ থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশ জুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হয় মহাবীর জয়ন্তী।
প্রতিবছর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে জৈন ধর্মালম্বী মানুষেরা অতি উৎসাহের সঙ্গে সমবেত হয়ে প্রায় তেরো দিন ধরে এই মহাবীর জয়ন্তী উৎসব পালন করে থাকেন। তবে করোনার কারণে চলতি বছর সেভাবে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালন না হলেও প্রতি বছরই এই বিশেষ দিনটি পালনের অন্যথা হয় না।
প্রতিবছর মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে জৈনরা রাস্তায় রথের মত করে মহাবীরের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের করেন। এই দিনটিতে তাঁরা জৈন ধর্মের বিভিন্ন দিক গুলি সকলের সামনে তুলে ধরেন। মানুষকে শান্তির বার্তা দেন। সৎ থাকার উপদেশ দেন।
এছাড়াও পদযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ভজন ও গানের মাধ্যমে মহাবীরের বাণী প্রচার করা হয়। এছাড়া জৈনদের বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। যে কোনও ধরনের জীব হত্যার বিরুদ্ধে জৈনদের খাবারও বিশেষ হয়। খাবারে পেঁয়াজ ও রসুন বর্জন করেন জৈনরা। শুধু তাই নয়, এদিন বিভিন্ন জৈন মন্দির গুলিতে গরীব মানুষদের জন্য দান, ধ্যাণ ও সেবামূলক কাজকর্ম করা হয়। এই দিনে নানারকম ঐতিহ্যবাহী খাবারও রান্ন করা হয়।
মহাবীর জয়ন্তী সমগ্র দেশ জুড়ে পালিত হয় তবে কয়েকটি জায়গা রয়েছে যেখানে এটি অত্যন্ত উৎসাহের সহিত উদযাপিত হয়। সেই স্থানগুলি হল – কলকাতার পরেশনাথ মন্দির। বিহারের ভাগলপুর এবং নালন্দা জেলা। বিহারের পাওয়াপুরী। রাজস্থানের মাউন্ট আবু। এছাড়াও রাজস্থানের মহাবীর রাজজি মন্দির।
তবে ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা কম হলেও উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ গুলিতে প্রবাসী জৈনদের অস্তিত্ব রয়েছে। বিশেষত, শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তিদানের এক প্রাচীন প্রথা জৈনদের মধ্যে আজও বর্তমান।
নির্বাহী সম্পাদক