গত বছর তুলনায় করোনাভাইরাস দ্বিতীয় ধাপে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এমন অনেকেই আছেন, যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েও টের পাচ্ছেন না। এর ফলে আক্রান্তের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস।
সাধারণ কিছু শারীরিক সমস্যাও কিন্তু এখন হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক। যা আমরা নিতান্তই সাময়িক অসুস্থতা ভেবে উপেক্ষা করি। যেমন-জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, গলা ব্যথা বা বমি ভাব। এগুলো সাধারণ ফ্লু’র লক্ষণ হিসেবেও বিবেচিত।
করোনার দ্বিতীয় ধাপে বেশ কয়েকটি উপসর্গ আক্রান্তদের সবার মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। যেগুলো সাধারণ হলেও মহামারির এ সময় এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। এর ফলে সংক্রমতি হতে পারে আপনার পরিবার বা অন্যান্যরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছরের তুলনায় করোনাভাইরাস আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর ফলে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। কেউ কেউ গুরুতর জটিলতাও ভোগ করছেন। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেই যে জ্বর, গলা ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হবে এমনটা নয়। একেকজনের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
বর্তানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বশি যেসব উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে, জেনে নিন সেগুলো-
গলা ব্যথা: বেশ কয়েকদিন ধরে গলা ব্যথা হলে উপেক্ষা করবেন না। হয়তো অনেকেই ভাবছেন, গরমে হয়তো ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা হচ্ছে। বিষয়টি নাও হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, গলার মধ্যে চুলকানি অনুভব করা, গলা ফুলে যাওয়া, গিলতে কষ্ট হওয়া, গলার মধ্যে সাদা সাদা দাগ-ছোপ পড়া, গলায় খুশখুশে ভাব এসব সমস্যো দেখা দিলে দ্রুত কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হবে। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ শতাংশেরও বেশি রোগীর শরীরে এসব লক্ষণটি প্রকাশ পেয়েছে।
ক্লান্তি: গরমে সামান্য পরিশ্রম করলেই শরীর হয়ে পড়ে ক্লান্ত। তবে নিয়মিত শরীর ক্লান্ত বোধ করা হতে পারে করোনার সংক্রমণ। কাশি এবং গলা ব্যথা ছাড়াও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, প্রচুর কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ক্লান্তি যেকোনো ভাইরাল সংক্রমণের একটি সাধারণ লক্ষণ। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রেও এ লক্ষণটি প্রকাশ পেয়েছে।
মাংসপেশিতে ব্যথা বা শরীরে ব্যথা: করোনার প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে অনেকের শরীরেই পেশি ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, শরীরে ব্যথা, উঠতে-বসতে কষ্ট হওয়া এমনকি হাঁটাহাঁটিতে অসুবিধা হওয়ার বিষয়গুলো প্রত্যক্ষ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পেশি ও শরীরে ব্যথা হওয়ার প্রধান কারণ হলো মাইলজিয়া। যা ভাইরাস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ পেশির টিস্যু আস্তরণে আক্রমণ করলে হয়ে থাকে। সংক্রমণ চলাকালীন সময়ে জয়েন্টে ব্যথা, দুর্বলতা এবং শরীরের ব্যথা হতে পারে।
জ্বর জ্বর বোধ করা: চরম ঠান্ডা লাগা বা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপুনি বোধ করা কোভিড-১৯ সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর জ্বর ভাব অনুভূত হওয়ার পর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। এমন সমস্যায় অধিকাংশ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীরাই ভুগেছেন।
বমি বমি ভাব এবং বমি: করোনা সংক্রমণে ফলে প্রাথমিক অবস্থায় শরীরের অন্যান্য লক্ষণের পাশাপাশি বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। সেই সঙ্গে ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের সমস্যা ভুগতে হতে পারে।
মাথা ঘোরা: যেহেতু শরীরের মধ্যে ভাইরাসটি ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে, তাই শরীর দূর্বল হওয়াটা স্বাভাবিক। পাশাপাশি প্রাথমিক অবস্থায় মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অস্থিরতা বোধ করেছেন অনেক রোগীরা।
এসব সাধারণ লক্ষণের পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় ধাপে আরও বেশ কয়েকটি নতুন লক্ষণ আক্রান্তের শরীরে দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলোর মধ্যে- শ্রবণশক্তি হ্রাস, পেশী ব্যথা, ত্বকের সংক্রমণ, চোখ ফুলে যাওয়া ও ঝাপসা দেখা ইত্যাদি।
সবগুলো লক্ষণ শরীরে একসঙ্গে প্রকাশ পাবে এমনটি নয়। এগুলোর মধ্যে দুই একটি সমস্যাতেও যদি আপনি কয়েকদিন যাবৎ ভুগে থাকেন; তাহলে দ্রুত কোভিড-১৯ পরীক্ষা করিয়ে নিয়ম অনুসারে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
নির্বাহী সম্পাদক