বোলিংয়ে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। মুস্তাফিজ-মেহেদি মিলে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডার। কিন্তু সেই ছন্দ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেন না বাংলাদেশের বোলাররা। বাজে ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের মহড়ায় আশা জাগিয়েও কিউইদের কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছে লাল-সবুজের দল।
এই জয়ের সুবাদে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হবে আগামী ২৬ মার্চ।
ক্রাইস্টচার্চে বোলিংয়ে শুরুটা বেশ ভালো করে বাংলাদেশ। আগ্রাসী হওয়ার আগেই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। মুস্তাফিজের করা পঞ্চম ওভারের শেষ বল মিডউইকেট দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন গাপটিল। কিন্তু বল উপরে উঠে গেলে ক্যাচ নেন মুস্তাফিজ। ২৪ বলে ২০ রানে থামেন কিউই ওপেনার।
মুস্তাফিজের পর জোড়া আঘাত হানেন মেহেদি হাসান। প্রথমে ওপেনার হেনরি নিকোলসকে ফাঁদে ফেলেন তিনি, এরপর তুলে নেন উইল ইয়ংয়ের উইকেট। নবম ওভারের মেহেদির করা অফ স্টাম্পের ওপর পড়া বলটিতে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন নিকোলস। কিন্তু বল তাঁকে ফাঁকি দিয়ে হয়ে যায় স্টাম্প। এরপর মেহেদির বলেই স্কুপ করতে গিয়ে কাটা পড়েন উইল ইয়ং।
দলীয় ৫৩ রানে তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তখন বাংলাদেশের খানিকটা জয়ের আশা জাগে। কিন্তু টম ল্যাথাম ও কনওয়ের জুটিতে ক্রমেই শেষ হয়ে যায় সে আশা। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে করেন ১১৩ রান। মূলত ম্যাচ ঘুরে যায় ওই জুটিতেই। সঙ্গে বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের মহড়া তো ছিলই। দুটি সহজ ক্যাচ মিস করে ল্যাথামকে জীবন দেন মুশফিক ও মেহেদি। তাসকিনের করা বলে মুশফিক সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। এরপরই ক্যাচ মিস করেন মেহেদি। ডিপ মিড উইকেটে নিজের বলেই সুযোগ হারান এই বোলার।
বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের মহড়ায় সুযোগ পেয়ে নিজের লক্ষ্যে ভালোভাবেই পৌঁছে যান কিউই অধিনায়ক। তুলে নেন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি। অধিনায়কের ব্যাটে ভর করে ১০ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। ১০১ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করা ল্যাথাম শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন।
শুরুতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। ৭৩ রানে অপরাজিত ছিলেন মিঠুন।
এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নেন লিটন দাস (০)। ওভারের চার নম্বর বলে ম্যাট হেনরিকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দলীয় চার রানে লিটনকে হারানোর পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলান তামিম। দ্বিতীয় জুটিতে দুজন মিলে তোলেন ১১৬ বলে ৮১ রান। এরপর ২০তম ওভারে ফেরেন সৌম্য। মিচেল স্যান্টনারের বলে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ৩২ রান করা সৌম্য।
পরে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তামিম। ওই জুটিতে আসে ৪৮ রান। এর মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫০তম হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তামিম। ৮৪ বল খেলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ফিফটির হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করলেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ৪৮ ফিফটি নিয়ে দুইয়ে আছেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকুর রহিমের ফিফটি ৩৯টি ও মাহমুদউল্লাহর ২২টি।
হাফসেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির পথে ছুটছিলেন তামিম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না তা। ৩০ ওভারে নিশামের একটি বল মুশফিকুর রহিম আলতো করে খেলেই ছুটতে থাকেন সিঙ্গেল নিতে। ছুটে আসেন বোলার নিশামও। নিচু হয়ে বল কুড়িয়ে থ্রো করার সময় ছিল না নিশামের হাতে। কিউই বোলার বাঁ পায়ে টোকা দেন বলে, যা একদম গিয়ে স্ট্যাম্প স্পর্শ করে। ৭৮ রানে থামতে হয় তামিমকে। ১০৮ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারি। তামিমের পর মুশফিক ফেরেন ৩২ রানে।
এরপর লড়াই করেছেন মিঠুন। মূলত রানের গতি বাড়ান তিনিই। বাকিরা ধীর গতির হলেও মিঠুনের ব্যাট চলছে দ্রুত। ছক্কা মেরে স্পর্শ করেন হাফসেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ১৬ রানে মাহমুদউল্লাহকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন কাইল জেমিসন। মাহমুদউল্লাহ ফিরলে বাকি পথ টানেন মিঠুন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পায় ২৭১ রানের সংগ্রহ। ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন মিঠুন।
বল হাতে ৫১ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন মিচেল স্যান্টনার। ৩৬ রান দিয়ে কাইল জেমিসন নেন একটি। ৪৮ রানের খরচায় একটি নেন ম্যাট হেনরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭১/৬ (তামিম ৭৮, সৌম্য ৩২, লিটন ০, মিঠুন ৭৩*, মুশফিক ৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১৬, মেহেদি ৭, সাইফউদ্দিন ৭*; জেমিসন ১০-২-৩৬-১, বোল্ট ১০-০-৪৯-১, হেনরি ১০-৩-৪৮-১, স্যান্টনার ১০-০-৫১-২, নিশাম ৯-০-৭৩-০)।
নিউজিল্যান্ড : ৪৮.২ ওভারে ২৭৫/৫ (গাপটিল ২০, নিকোলস ১৩, কনওয়ে ৭২, উইল ইয়ং ১, ল্যাথাম ১১০*, নিশাম ৩০, মিচেল ১২*; তাসকিন ১০-০-৬৭-০, সাইফউদ্দিন ৭.২-০-৪৩-০, মুস্তাফিজ ৮.৩-০-৬২-২, মেহেদি ১০-০-৪২-২, মিঠুন ২-০-১২-০, মিরাজ ১০-১-৩৮-০)।
ফল : পাঁচ উইকেটে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে জিতল নিউজিল্যান্ড।
প্রতিনিধি