করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কয়েকটা কথা আবার বলি, পুরানো কথা কিন্তু জরুরি এবং বার বার নিজেদের মনে করানো অত্যাবশ্যক।
১
তাপমাত্রা, সংরক্ষণ, পরিবহন ইত্যাদি কারণে এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনই একমাত্র ভ্যাকসিন যেটা বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহার করা সম্ভব। পৃথিবী যে কয়টি দেশ ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে তার অনেক দেশই একই কারণে ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারছে না।
২
ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য করোনাভাইরাস থেকে আপনাকে প্রতিরক্ষা দেয়া নয়। কোন ভ্যাকসিন নির্মাতা বলে নাই যে ভ্যাকসিন নিলে আপনার করোনা হবে না। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও আপনার করোনা হতে পারে, অনেকের হচ্ছে। কিন্তু এই ভ্যাকসিনের মূল উদ্দেশ্য দুটি:
ক. করোনার কারণে যাতে মৃত্যু না হয়,
খ. হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করানোর মতো সিরিয়াস অসুস্থ যাতে কেউ না হয়।
অর্থাৎ, করোনার ক্ষতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাই এই ভ্যাকসিনের উদ্দেশ্য, এবং আপাতত সেটাই যথেষ্ট বলে মনে হয়।
৩
এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সক্ষমতা ফাইজার ও মডার্নার চাতে অনেকটা কম। এখানে আমার ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করুন। আমি সক্ষমতা বলেছি কার্যকারিতা বলি নাই। কেননা মৃত্যু ঠেকানো এবং করোনার ভয়াবহতা ঠেকানোর ক্ষেত্রে তিনটি ভ্যাকসিনই সমানভাবে কার্যকর। তবে ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যত মানুষের করোনা হবে, এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার চাইতে হয়ত বেশি মানুষের করোনা হবে। তবে আশা করি মৃত্যুর হার তিনটি ভ্যাকসিনই প্রায় সমানভাবে প্রতিহত করতে পারবে।
৪
এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বহুগুণে বেড়ে যায় যদি তিন মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেয়া যায়। ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ডের দুটি ডোজ নিলে কার্যকারিতা যেখানে প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি সেখানে ৮ সপ্তাহ বা তার কম ব্যবধানে দিলে কার্যকারিতা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকল আমাদের দেশে এই ব্যবধান তিন মাস করার জন্য।
৫
ক্যানাডায় এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন শুধুমাত্র ৬৫ বছরের নিচে মানুষদের দেওয়া হবে। তাদের হাতে যেহেতু তিনটি ভ্যাকসিনই আছে সুতরাং যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের ফাইজার ও মডার্না দেওয়া হচ্ছে।
৬
পৃথিবীর কোন দেশেই এখনও শিশুদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, মূলত শিশুদের করোনাভাইরাস থেকে মৃত্যু ঝুঁকি নাই বললেই চলে।
৭
করোনার ভ্যাকসিন নিলে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে কাজ হচ্ছে, আর না হলে কাজ হচ্ছে না – এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। প্রতিটি মানুষের শরীরের ভেতরের কল-কব্জা ভিন্নভাবে কাজ করে। তাই কারও প্রতিক্রিয়া হবে না, কারও কম হবে, কারও বেশি হবে।
ভ্যাকসিন পারলে নিয়ে নিন। দুটো কথার উপর জোর দিয়ে লেখাটা শেষ করি। ১. করোনার ভ্যাকসিনের মূল কাজ করোনাকে ঠেকানো নয়; করোনার কারণে মৃত্যু এবং ভয়াবহতা কমানো। ২. এস্ট্রোজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের মধ্যের ব্যবধান ১২ সপ্তাহের নিচে হলে কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। দয়া করে সরকার দুটি ডোজের মধ্যে ব্যবধান ১২ সপ্তাহ করার নির্দেশনা দিন।
শামীম আহমেদ: সোশাল এন্ড বিহেভিয়ারাল হেলথ সায়েন্টিস্ট, ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টো
নির্বাহী সম্পাদক