সিলেটের রশিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ডা. শারমিন আক্তার অন্তরার (২৯) শরীরে অস্ত্রোপচার সম্পন্নের পর তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, পরে রাতে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিউতে রাখা হলেও তার আইসিউ সাপোর্ট লাগছে না।
শনিবার (২৭ ফেরুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) চিকিৎসক ডা. সোহেল আহমদ সরকার।
এদিকে শুক্রবার সকালে সিলেটে হয়ে যাওয়া মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় অন্তরার স্বামী ডা. আল মাহমুদ ইমরান খান (৩৬) ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তবে এখন পর্যন্ত স্বজনরা অন্তরাকে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর না জানানো হলেও তিনি আচ করতে পেরেছেন যে তার স্বামী ইমরান আর বেঁচে নেই।
ডা. সোহেল আহমদ সরকার জানান, সকালে ডা. অন্তরার মুখে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। তিনি সুস্থ রয়েছেন। তবে বার-বার তিনি তারা স্বামীর খোঁজ করছেন। তবে স্বজনরা তার স্বামী অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলেও জানালেও তিনি তা মানতে নারাজ। তিনি বলছেন “আমি সব জানি”।
এছাড়া সিলেটের রশিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় সিলেটের সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ১৫ জন। তাদের সকলের অবস্থায় এখন ঝুঁকিমুক্ত। তবে এদের মধ্যে ৩ জনের হাতে ও পায়ে একাধিক ভাঙা থাকায় তাদের অবস্থা কিছুটা গুরুতর বিবেচনায় রেখেছেন চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সকলেই স্বাভাবিক আছেন। তবে ৩ জনের হাত পায়ের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ভাঙ্গা থাকায় অবস্থা গুরুতর বিবেচনা করা হচ্ছে। আর বাকিদেরে ছোটখাটো জখম আছে। গুরুতর ৩ জনের মধ্যে নিহত ডা. ইমরান খানের স্ত্রীকে আইসিউতে রাখা হয়েছে। তবে তার আইসিউ সাপোর্ট লাগছে না। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ কয়েকটি কারণে তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিউতে রাখা হয়েছে।
এছাড়া গতকাল এ দুর্ঘটনায় আহত মোট ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল দুর্ঘটনার পর সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ১৮ জনকে চিকিৎসা দেয়া হলেও দুই নারীকে তাদের স্বজনরা গতকালই ঢাকায় নিয়ে গেছেন করেছেন। তারা দুইজন ঢাকার বাসিন্দা এবং তাদের কোমরসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ভাঙা ও গুরুতর জখম রয়েছে।
শুক্রবারের এ দুর্ঘটনায় সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম। মামলাটি করেন থানার উপ পরিদর্শক এসআই লোকমান হোসেন। আরা মামলায় আসামি করা হয়েছে বাস দুইটির চালককে। যদিও তারা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। একইসাথে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি আর্থিক পরিমাণও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল টার দিকে সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩১৭৬) ও ঢাকাগামী এনা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৭৩১১) মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন মারা যান। এছাড়া হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ৪ মারা যান। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সালমান খান (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নুরুল আমিন (৫০), সাগর (১৯), সিলেটের ওসমানী নগরের মঞ্জুর আহমদ মঞ্জু(৩৫), একই উপজেলার জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০), ডা. ইমরান খান রুমেল (৪৮), সিলেট নগরের আখালিয়ার শাহ কামাল (৪৫) ও সুনামগঞ্জের ছাতকের রহিমা বেগম।
প্রতিনিধি