সিলেট নগরের চৌহাট্টায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষের সময় অস্ত্রসহ আটক ফয়সল আহমদ ফাহাদকে (৩৮) নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার পর সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, আটক ফাহাদ পরিবহন শ্রমিক এবং তার উপর হামলার জন্যই বন্দুক নিয়ে এসেছিলেন।
তবে পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফয়সল আহমদ ফাহাদ (৩৮) সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের ঘনিষ্ঠজন।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চৌহাট্টায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন সিটি করপােরেশনের কর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র ও সিটি কাউন্সিলররা। এসময় কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানও মেয়রের সাথে চৌহাট্টা এলাকায় যান। আরিফ-আফতাবসহ সব কাউন্সিলররা মিলে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের চেষ্টা চালান।
দুইপক্ষের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মেয়র কাউন্সিলরদের পাশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ফয়সল আহমদ ফাহাদকে (৩৮) আটক করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৌহাট্টায় পরিবহন শ্রমিকরা উন্নয়ন কাজে বাধা দিচ্ছে এমন খবর পেয়ে মেয়র ও অন্য কাউন্সিলরদের সাথে কাউন্সিলর আফতাবও সেখানে যান। তার সাথে চৌহাট্টায় যান ফাহাদও।
এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দখা গেছে, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের সাথে পাশপাশি হাঁটছেন ফয়সল আহমদ ফাহাদ। তবে এই ছবি কোন সময়ে তোলা তা যাচাই করা যায়নি।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে বন্দুক নিয়ে তিনি মেয়রের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এমন অভিযোগ করেছেন।
এমনকি বুধবার সন্ধ্যায় নগর ভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়ও মেয়র আরিফ দাবি করেন, অস্ত্রসহ আটক ফাহাদ পরিবহন শ্রমিক।
এ ব্যাপারে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে চৌহাট্টা শাখার কার-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অরুণ দেবনাথ বলেন, বন্দুকধারী যুবক পরিবহনশ্রমিক নন, এমনকি স্ট্যান্ডে রাখা কোনো গাড়ির মালিকও তিনি নন। কার পক্ষ নিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন, কীভাবে ধরা পড়লেন, এর কিছুই তারা জানেন না।
বুধবার রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, ফাহাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হচ্ছে। এছাড়া ফাহাদসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের এসল্ট মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি চলছে।
ফাহাদ কার পক্ষে চৌহাট্টায় গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনপক্ষই এখন পর্যন্ত এটি স্বীকার করেনি। আমরাও এখন পর্যন্ত তার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু বলেন, ফয়সল আহমদ ফাহাদ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক।
মিঠু বলেন, চৌহাট্টায় গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গেছে সিটি করপোরেশন। সেখানে ঝামেলা হলে পুলিশ দেখবে। সে (ফাহাদ) ওই জায়গায় যাবে কেন?
যদি আসলেই সে ওইখানে যায় এবং অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় তাহে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। দল এর দায় নেবে না। বরং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন মিঠু।
জানা যায়, বুধবার সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সিসিকের সড়ক উন্নয়ন কাজে বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এ খবর পেয়ে দুপুরে কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় তিনি দেখতে পান পরিবহন শ্রমিকরা তখনও সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রেখেছেন। এসময় মেয়রসহ সিসিকের কর্মকর্তারা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে চাইলে তারা বাধা দেন। এনিয়ে আলাপচারিতার একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিকদের হামলার পর পর সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পুলিশের উপরও হামলা চালায় শ্রমিকরা। এসময় অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এবং চৌহাট্টা-আম্বরখানা, চৌহাট্টা-রিকাবীবাজার, চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা-মিরবক্সটুলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ (ট্রাফিক) কমিশনার ফয়সল মাহমুদ বলেন, সরকারি রাস্তা দখল করে যানবাহন রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু সম্প্রতি সিসিকের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় চৌহাট্টাস্থ এলাকার অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড সরানোর জন্য বলা হলেও শ্রমিকরা যানবাহন না সরিয়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে সিসিকের কর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রতিনিধি