সম্প্রতি গোপনীয়তার নীতিমালা হালনাগাদ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য ফেসবুকের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। তা না-হলে প্লাটফর্মটি ছাড়তে হবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে। হোয়াটসঅ্যাপের এই কঠোর নীতিতে অসন্তুষ্ট অনেক ব্যবহারকারী। তবে ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, নীতি পরিবর্তন করায় ব্যবহারকারীদের কোনও সমস্যা হবে না।
হোয়াটসঅ্যাপের মতে, নীতিমালার এই হালনাগাদ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব ফেলবে না। আগে যা ছিল, তা-ই থাকবে। হালনাগাদ যে জায়গায় হয়েছে, সেটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাও আবার ঐচ্ছিক। ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়িক কাজে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করলে আমরা কীভাবে উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবহার করবো, সে ব্যাপারে বরং আরও স্বচ্ছতা এসেছে।
আমরা বা ফেসবুক, কেউই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত বার্তা পড়তে বা ফোনালাপ শুনতে পাই না: হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহারকারীরা বন্ধু, পরিবার-স্বজন বা সহকর্মীদের সঙ্গে যে ফোনালাপ বা বার্তা বিনিময় করেন, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক কেউই তা পড়তে বা শুনতে পায় না। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, ব্যক্তিগত বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু প্রাপকই প্রেরকের বার্তা পড়তে পারেন, ইংরেজিতে যাকে বলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। নিরাপত্তার এই ব্যবস্থা আমরা কখনও দুর্বল হতে দেবো না।
কে বার্তা পাঠাচ্ছেন বা আলাপ— সেই তথ্য আমরা সংরক্ষণ করি না: সাধারণত মোবাইল ফোন অপারেটররা এসব তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি, ২০০ কোটি ব্যবহারকারীর এত তথ্য সংরক্ষণের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমরা সেটা কখনও করি না।
ব্যবহারকারী ভৌগোলিক অবস্থান জানালেও আমরা বা ফেসবুক তা দেখতে পাই না: ব্যবহারকারীরা হোয়াটসঅ্যাপে নিজের অবস্থান সম্পর্কে কাউকে জানালে সেটা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এর মানে তা শুধু প্রাপকই দেখতে পান, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক দেখতে পায় না।
ফেসবুককে আমরা ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর দিই না: ব্যবহারকারী অনুমতি দিলেই কেবল আমরা ব্যবহারকারীর কনট্যাক্ট লিস্ট দেখতে পারি। সেটার উদ্দেশ্য হচ্ছে— বার্তা আদান-প্রদান আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য করা। ফেসবুকের অন্যান্য অ্যাপকে আমরা ব্যবহারকারীর কনট্যাক্ট লিস্ট সংশ্লিষ্ট কোনও তথ্য দেই না।
গ্রুপগুলো ব্যক্তিগতই থাকে: আমাদের সেবাকে স্প্যাম ও অপব্যবহার থেকে মুক্ত রাখতে গ্রুপের সদস্যদের আমরা বার্তা দিয়ে থাকি। বিজ্ঞাপনী উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য আমরা ফেসবুককে সেই তথ্য দিই না। এসব ব্যক্তিগত বার্তা গোপনীয় থাকে। শুধু প্রেরক ও প্রাপকই কেবল দেখতে পান।
ব্যবহারকারীরা চাইলে বার্তা মুছে দিতে পারেন: গোপনীয়তা আরও নিশ্চিত করার আরেকটি ব্যবস্থা— প্রেরক বার্তা পাঠানোর পর চাইলে তা সঙ্গে সঙ্গে মুছে দিতে পারেন।
তথ্য-উপাত্ত ডাউনলোড করা যায়: ব্যবহারকারী সম্পর্কে আমাদের কাছে কী তথ্য আছে, ব্যবহারকারী চাইলে তা দেখতে ও ডাউনলোড করতে পারেন।
ব্যবসায়িক বার্তা ও ফেসবুকের সঙ্গে আমরা যেভাবে কাজ করে থাকি: প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবসায়িক যোগাযোগ করে থাকেন। ছোট হোক বা বড় ব্যবসা, সব ক্ষেত্রেই এটি হয়ে থাকে। এই ব্যবসায়িক যোগাযোগ আমরা আরও উন্নত করতে চাই। যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসব ফিচার ব্যবহার করবে, আমরা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সে বিষয়ে সব সময় পরিষ্কারভাবে জানাবো।
ফেসবুক হোস্টিং সেবা: হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবসায়িক যোগাযোগ আর ব্যক্তিগত যোগাযোগ এক নয়। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী হোস্টিং সেবা ব্যবহার করতে হয়। যাদের অনেক বেশি যোগাযোগ করতে হয়, তাদের জন্য এটি প্রযোজ্য। ঠিক এ কারণে আমরা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফেসবুক থেকে নিরাপদ হোস্টিং সেবা ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তারা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে প্রশ্ন-উত্তর ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারে। বিষয়টি হচ্ছে, ব্যবহারকারী ফোন, ই-মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপ যেই মাধ্যমই ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করুক না কেন, তারা সে সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেই তথ্য বিপণনের উদ্দেশে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া। তবে প্রাপক যাতে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকেন, সে জন্য আমরা ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করে দিই, কারা ফেসবুকের হোস্টিং সেবা ব্যবহার করছেন।
নতুন বাণিজ্যিক দিক: মানুষ ক্রমশ অনলাইনে কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছে। ফেসবুকে শপস নামের একটি ফিচার আছে, সেটার কল্যাণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হোয়াটসঅ্যাপে তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। ব্যবহারকারীরা দেখতে পারবেন, তাদের কেনাকাটার মতো কী আছে। এ ছাড়া ব্যবহারকারী শপসে কেনাকাটা করলে পছন্দ অনুসারে তাদের পন্য তালিকা সাজানো থাকবে। এমনকি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে যে বিজ্ঞাপন ব্যবহারকারীরা দেখে থাকেন, সেটাও ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী দেখা যাবে। তবে এসব ফিচার ঐচ্ছিক। ব্যবহারকারীরা এসব ব্যবহার করলে আমরা আগেভাগেই জানিয়ে দেবো, তার তথ্য ফেসবুককে কীভাবে দেওয়া হবে।
নতুন ব্যবসা পণ্য খুঁজে পাওয়া: ফেসবুকে অনেক সময় বাটনযুক্ত বিজ্ঞাপন দেখা যেতে পারে, যা ব্যবহার করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া যায়। ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে এই সুযোগ মিলবে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পছন্দ অনুসারে ফেসবুকেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হতে পারে।
বার্তা বিভাগ প্রধান