Home » তেল–চালের বাজার গরম

তেল–চালের বাজার গরম

আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণার প্রভাব নেই চালের দামে। উল্টো বেড়েছে। তবে ভারত রপ্তানি খুলে দেওয়ার খবরে প্রতিদিন কমছে পেঁয়াজের দাম।বাজারে অস্বস্তির মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। সংসারের জরুরি দুটি পণ্য চাল ও ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে বেড়েছে। সদ্য ফেলে আসা বছরের শেষ দিনে বেড়েছে ডিমের দাম। চাল, তেল, ডিমের পাশাপাশি চিনিতে কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে। এদিকে বাজারে স্বল্পতার কারণে পুরোনো আলুর দাম বেড়েছে। নতুন আলু মিলছে পুরোনো আলুর চেয়ে কিছুটা কম দামে। আদা, মসুরের ডালের দামও বেড়েছে। তবে শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন সব ধরনের সবজি মিলছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার ভেতরে।

রাজধানীর তিনটি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে কয়েক ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাঁরা বলছেন, চাল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণার পর দাম উল্টো বাড়তির দিকে। এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা আসার পর থেকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই কমছে।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গতকাল সরু মিনিকেট চাল ৬২ টাকায়, নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় আর বিআর ভালো মানের ২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। খুচরা বাজারে চালের দাম ছিল আরও বেশি। পাড়া–মহল্লার খুচরা দোকান থেকে মানুষকে সরু মিনিকেট চাল ৬৫-৬৭ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। আর ভালো মানের বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা দরে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমন মৌসুম চললেও বাজারে নতুন চালের সরবরাহ কম। মিলাররা চাল ছাড়ছেন না বলে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, চালের ওপর কর কমানোর পর চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে আমদানি শুরু হয়নি। এদিকে মিলাররা বেশি লাভের আশায় নতুন চাল কম দামে ছাড়ছেন না। ফলে চালের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর তিনটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেল, বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা পাম তেলের দাম বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকালের হিসাব বলছে, গতকাল ১ লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ১০৪ থেকে ১০৭ টাকা ছিল। ১ লিটারের বোতলজাত তেল বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়, যা গেল সপ্তাহে ৫ টাকা কম ছিল। আর খোলা পাম তেলের দাম ৯৫ থেকে ৯৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গেল সপ্তাহে ৯৩ থেকে ৯৫ টাকা ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো তেলের দাম আগেই বাড়িয়েছিল। সেই দাম নতুন বছরে এসে বাজারে প্রভাব পড়েছে। তাঁরা এত দিন পুরোনো দামে তেল বিক্রি করছিলেন। তেলের দাম দু-এক দিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।

মালিবাগের খোরশেদ স্টোরের বিক্রেতা মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, কোম্পানি বাড়াচ্ছে বলে খুচরা বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। আগামী দু-এক দিনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে তাঁর ধারণা।মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬২ থেকে ৬৩ টাকায়। এখানে পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায় আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। এদিকে বিদেশি আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। আর মাঝারি দানার মসুরের ডাল ৫ টাকা বেড়ে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়। আলুর দামের কেন পার্থক্য জানতে চাইলে আলু বিক্রেতা নবী হোসেন বলেন, পুরোনো আলু বাজারে নেই বলতে গেছে। অথচ অনেকেই পুরোনো আলু খোঁজে। এই জন্য দাম বেশি।

বছরের শেষ দিনে এসে বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা মো. শরীফ হোসেন বলেন, গতকাল ডিমের ডজন ৮৫ টাকা ছিল। এটা বেড়ে ৯০ টাকা ডজন হয়েছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি ১৮০ টাকা ডজন, হাঁস ১৫০ টাকা ডজন, ফার্মের সাদা ডিম ৮৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হওয়ার খবরের পর থেকেই দু-এক দিন ধরে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। রাজধানীর তিনটি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। আর চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে।সবজির দাম কিছুটা কমেছে। সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। বাজারে উঠেছে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি। এগুলোর প্রতি কেজি দাম হাঁকা হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। পুরোনো টমেটোর দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা, আর নতুন টমেটো মিলছে কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। খিলগাঁও রেলগেটের বাজারে চার পদের সবজি কিনলেন একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা এ জি এম আশরাফ। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজিগুলোর দাম কিছুটা কমেছে। তবে গত বছরের শীতের এই সময়ের তুলনায় বাড়তিই রয়ে গেছে। সূত্র: প্রথম আলো

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *