শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর:
মহাকাশের পথে পাড়ি জমাল বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। শুক্রবার (১২ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে মহাকাশের পথে উড়াল দেয় বঙ্গবন্ধু-১। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দিয়ে অবস্মরণীয় এক অর্জন হলো বাংলাদেশের। বহু আগেই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার মহাকাশেও লাল সবুজের গৌরবগাথা দেখল বিশ্ব। ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠালো বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত কয়েকবার তারিখ বদলানোর পর এবার প্রতীক্ষার অবসান হলো। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন-৯ ব্লক-৫ রকেটে চেপে আকাশে উড়াল দেয় সাড়ে তিন হাজার কেজি ওজনের এই স্যাটেলাইট।রকেটটি মহাকাশে বাংলাদেশের ভাড়া নেওয়া অরবিটার স্লট ১১৯.১ ডিগ্রিতে নিয়ে যাবে স্যাটেলাইটটিকে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘অত্যন্ত সফলভাবে ও নির্দিষ্ট সময়েই স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের খবর।’ তিনি আরও বলেন,‘অরবিটাল স্লট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে স্যাটেলাইটটির ১০-১২দিন সময় লাগতে পারে। অরবিটাল স্লটে সেট হওয়ার পর তা সিগন্যাল পাঠানো শুরু করবে। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই।’ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে ২৬টি কু-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার ও ১৪টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এটি সক্রিয় হলে দেশের টেলিভিশন ও ব্রডব্যান্ড যোগাযোগে উন্নতি ঘটবে। এ স্যাটেলাইটের কারণে তিন ধরনের সেবা ও ৪০ ধরনের সুফল পাবে দেশবাসী। শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলেও প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তা উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরে নতুন তারিখ ঠিক হয় এ বছরের ১ মার্চ। আবারও পরিবর্তন হয় সম্ভাব্য তারিখ। নতুন তারিখ ধরা হয় মার্চের শেষ সপ্তাহ বা ২৬-৩১ মার্চের মধ্যে যেকোনও দিন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও মহাকাশে ওড়েনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বেশ কয়েকবার তারিখ নির্ধারণের পরও স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করতে দেরি হচ্ছিল। সর্বশেষ গত ১০ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আটকে যায় উৎক্ষেপণ। কারিগরি জটিলতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে জানিয়েছিল মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উৎক্ষেপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। অন্যগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে। ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটে (নিরক্ষরেখায়) উড়বে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষরেখা (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) লিজ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ১৫ বছরের চুক্তিটি করা হলেও তিন ধাপে তা ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে বছরে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় এখন অন্য দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছিল বাংলাদেশকে। অন্যদিকে দেশের স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট ভাড়া করে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে আসছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট হলে ভাড়ার টাকা আর বিদেশে পাঠাতে হবে না। ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সরকার প্রতি বছর রাজস্ব হিসেবে আয় করতে পারবে।
[youtube v=”1ikqpnPWd4U”]