শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: গরমের এই সময়ে জনসমাগমপূর্ণ কোনও এলাকায় গেলে চোখে পড়বে রাস্তার ধারে ভাসমান দোকানিরা আনারস ও তরমুজ কেটে সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছেন। বিক্রি হচ্ছে বরফ দেওয়া ফলের শরবত। রসালো আনারস বা লাল তরমুজ গরমে-যানজটে ক্লান্ত নগরবাসীর জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ট!
সাধারণত পথ চলতি মানুষজনই, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন এসব খাবার খান। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও অস্বাস্থ্যকরভাবে বিক্রি হওয়া এসব খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
মৌসুমি ফলের মধ্যে আনারস এবং তরমুজ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় কেটে পিস করে বিক্রি করা হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় অফিসপাড়া খ্যাত মতিঝিল ও পল্টন এলাকায়। দিনে লাখো মানুষের যাতায়াত এই এলাকায়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি এসব ফল ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে নোংরা পানি। কেটে রাখা ফলের ওপর উড়ে উড়ে বসছে মাছি, পড়ছে ধুলাবালি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার ধারের এইসব ফল, খাবার, শরবত বিভিন্ন অসুখ, বিশেষ ডায়রিয়ার জন্য অনেকাংশেই দায়ী।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট লুবাবা শাহরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তার ধারের খাবার খুবই অনিরাপদ। এই যে ফল বিক্রি হচ্ছে এগুলো পরিষ্কারে কী পানি ব্যবহার হচ্ছে, আমরা জানি না। আবার একটি মাছি ড্রেনের পানিতে বসছে, সেখান থেকে উড়ে এসে এসব খাবারের ওপরেও বসছে। আমরা না বুঝেই অনায়াসে খেয়ে যাচ্ছি। যে কারণে বাড়ছে ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। আমাদের এখানে প্রতিদিনই প্রচুর রোগী আসছে। তাদের যে কয়জনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা জানিয়েছেন সবাই বাইরের খাবার কিছু না কিছু খেয়েছেন। ভ্যানগাড়ি থেকে ফল, দোকান থেকে পানি কিংবা রাস্তার ধারের শরবত খাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
গরমের সময় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় প্রতিবছরই। তাই শরীরে বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে রাস্তার ধারের ফল কিংবা শরবত খাওয়ার প্রতি বেশি ঝুঁকে সাধারণ মানুষ।
পল্টন এলাকার ফল বিক্রেতা ফজলুর মতে, অল্প টাকায় তৃষ্ণা মেটানো যায় বলেই এসব খাবারের চাহিদা বেশি। তিনি বলেন, ‘আস্ত তরমুজের ম্যালা দাম। ভাইঙ্গা বেচলে লাভও হয়, মানুষও খায় বেশি। এক প্লেট বেচি ২০ টাকায়। আস্ত তরমুজ দিনে ২-৩টা বিক্রি হয়, কিন্তু কাইট্টা বেচলে ৭-৮টা বেচন যায়।’
এদিকে, রাজধানী ও এর আশপাশে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) সূত্রে জানা যায়, গত সাত দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার রোগী। প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। সোমবার (৭ মে) দুপুরেও ডায়রিয়া রোগীর উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বাড়তি রোগী সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি রোগীর ব্যবস্থাপনার জন্য আইসিডিডিআরবির কলেরা হাসপাতালের সামনে তাঁবু টাঙিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি বাসার কেয়ারটেকার ইদ্রিস মিয়া। শনিবার রাত থেকে তিনি অসুস্থ। কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন রবিবার। অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়ি থেকে আনারস খেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান