সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল গেল বছরের ডিসেম্বরে। এর মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসে উভয় শাখায়। নতুন কমিটির প্রত্যাশায় নেতাকর্মীরাও উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। কিন্তু সম্মেলনের পর আরও প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পূর্ণাঙ্গ হয়নি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। মাস দুয়েক আগে কেন্দ্রের নির্দেশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু জমা দেওয়া কমিটি নিয়ে দেখা দেয় বিতর্ক। পরে পাল্টা কমিটিও জমা পড়ে কেন্দ্রে। এসব অসন্তোষের প্রেক্ষিতে কমিটি আটকে গেছে কেন্দ্রে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই কমিটি আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। জেলায় আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান সভাপতি ও আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। মহানগরে আগের কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক হন।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তাদেরকে তিন মাসের সময় দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু মার্চে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ায় থমকে যায় কমিটির কাজ। কয়েক মাস পর পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আগস্টের শেষ দিকে কেন্দ্র থেকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কঠোর নির্দেশনা আসে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা পড়ে কেন্দ্রে।
কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে দেখা দেয় অসন্তোষ। ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের অবমূল্যায়ন, বিতর্কিতদের স্থান প্রদান, ক্রমবিন্যাসে বিশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কেন্দ্রে জমা পড়া কমিটির বিপক্ষে সিলেটে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাবেক কমিটির এক ডজনের বেশি নেতাকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া যারা আগের কমিটিতে সবসময় সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন, তাদেরকে যথাযথ পদে না রাখারও অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা।
এসব অসন্তোষ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ারের নেতৃত্বে বিকল্প একটি কমিটি জমা পড়ে কেন্দ্রে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহানগরের সাধারণ সম্পাদককে ডাকা হয় কেন্দ্রে। পরে মহানগরের একটি সংশোধিত কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ‘বঞ্চিত আওয়ামী লীগ’র ব্যানারে মিছিল করেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, কমিটি জমা দেওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করছে কেন্দ্র। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন হতে পারে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন কমিটির প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রে কমিটি জমা দিয়েছি। কেন্দ্রই এখন সিদ্ধান্ত নেবে।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। এখন কেন্দ্রই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের নিয়ে কমিটি করার চেষ্টা করেছি আমরা। সাবেক কমিটির নেতাদেরও আমরা মূল্যায়ন করেছি। তবে বড় দল হিসেবে ছোটখাটো সমস্যা তো থাকবেই। আমরা আশা করছি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা হবে।’
প্রতিনিধি