যদিও সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলছেন, সোমবার সকালে ভারতে পালানোর সময় কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তা্র করে পুলিশ।
তবে আকবরকে আটকের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে ভিন্ন দৃশ্য। এসব ভিডিওচিত্রে দেখা যায়- আকবর আটক হন ভারতীয় সীমান্তে। সেখানকার খাসিয়া আধিবাসীরা তাকে আটক করে। এরপর বাংলাদেশি এক ব্যক্তি তাকে দেশে এনে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
এই ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর আকবরকে গ্রেপ্তার বিষয়ে পুলিশের দাবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আকবরকে সাধারণ জনতা আটক করেছে, পুলিশ জনতার ক্রেডিট ছিনতাই করছে- এমন অভিযোগও করছেন কেউ কেউ।
তবে সিলেটের পুলিশ সুপার বলছেন, জেলা পুলিশ কারো ক্রেডিট ছিনতাই করেনি। বরং যারা এমন সমালোচনা করছেন তারা পুলিশের অর্জন ও পরিশ্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার নিজের ফেসবুকে এমনটি লেখেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। ফেসবুকে একটি নিউজ লিংক শেয়ার করে এমনটি দাবি করেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপারের শেয়ার করা সংবাদটি রহিম উদ্দিনকে নিয়ে। কানাইঘাট এলাকার ওই বাসিন্দা ভারতে আটক হওয়া আকবরকে দেশে নিয়ে আসেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। সেই ঘটনারও একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। এই ভিডিওতে একপর্যায়ে রহিম উদ্দিনকে ফোনে বলতে শোনা যায়- ‘ওসি স্যাররে কও আমি পাইছি, আমি লগে লগে আছি ওখন’।
এ সংক্রান্ত সংবাদটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন লেখেন-
সত্য না জেনে অনেকে বাজে মন্তব্য করেছেন। সিলেট জেলা পুলিশ কারো ক্রেডিট ছিনতাই করে নাই বরং কিছু লোক আংশিক তথ্য জেনে আমাদের পরিশ্রম এবং অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
একইদিনে এসপি সিলেট নামক ফেসবুক পেজ থেকে ‘আকবর গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য প্রদান করা হয়।
এতে বলা হয়- সোমবার (৯ নভেম্বর) সকাল আনুমানিক ৯ টার সময় সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বাংলাদেশ- ভারত সীমান্তবর্তী ‘ডুনা’ এলাকা থেকে বরখাস্তকৃত এসআই আকবরকে সিলেট জেলা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিশ্বস্ত সোর্স কিংবা মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে যারা আসামির অবস্থান এবং চলাফেরা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকেন। এসআই আকবরের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও সিলেট জেলা পুলিশ একইভাবে একাধিক সোর্স এবং মাধ্যম ব্যবহার করেছে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার গ্রেপ্তারে সহায়তা করেছেন। কৌশলগত কারণে সোর্স এবং মাধ্যম সম্পর্কে কোন তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ বিষয়টাকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। সিলেট জেলা পুলিশ সবসময়ই জনগণের আস্থা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেবা প্রদান করে থাকে। এ বিষয়ে সকলের সহায়তা একান্তভাবে কাম্য।
আকবরকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেছিলেন, আকবর কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে পারে এমন তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। সেই তথ্যে রোববার থেকে কানাইঘাট সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। সকালে সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
রায়হান হত্যার প্রায় এক মাস পর গ্রেপ্তার হওয়া আকবরকে মঙ্গলবার ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১০ অক্টোবর শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই। এ মামলায় এখন পর্যন্ত আকবরসহ ৪ পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।