শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম : ভাঙড় আর ব্যতিক্রম রইল না। হোয়াট্সঅ্যাপের পর এ বার ই-মেলে পাঠানো মনোনয়নপত্রকেও বৈধতা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ই-মেলে পাঠানো সিপিএমের মনোনয়ন পত্র দেখায় অনীহা দেখিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ই-পদ্ধতিতে কী মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে, তা খতিয়েও দেখেনি কমিশন। ই-মনোনয়ন করলে জীবনহানি অনেক কম হয়। মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অভিযোগও কম ওঠে। বিচারপতি সমাদ্দারের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, গত ২৩ এপ্রিল বিকাল ৩টে পর্যন্ত যাঁরা ই-মেলে কমিশনের কাছে মনোনয়নপত্র পাঠিয়েছে তাঁদের সকলের নাম বৈধ হিসাবে প্রার্থী তালিকায় রাখতে হবে। যে হেতু এই মামলার আবেদনকারী সিপিএম, তাই এই নির্দেশ শুধুমাত্র তাদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর করা একটি মামলার এ দিন শুনানি ছিল। পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে করা ওই মামলার শুনানি ফের বৃহস্পতিবার হবে বলে জানিয়েছে আদালত। ওই দিন রায় ঘোষণা করা হবে বলেও আদালত সূত্রে খবর। তবে, আগামী ১৪ মে রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে। কারণ, ই-মনোনয়নকে মান্যতা দেওয়ায় ফের তা স্ক্রুটিনি করতে হবে। নতুন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে, নয়া ব্যালট ছাপিয়ে যা এই সংক্ষিপ্ত সময়ে করা প্রায় অসম্ভব।
অন্য বিরোধী দলগুলিও ই-মনোনয়ন দাখিল করেছে। বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘সিপিএম তো অনেক কম ই-মনোনয়ন দাখিল করেছে। আমাদের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা দু’হাজারের উপর। রায় যে হেতু সিপিএমকেই দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা জিজ্ঞেস করব। প্রথমে কমিশনে যাব। তারা যদি আমাদের ই-মনোনয়ন গ্রাহ্য করে তা হলে ভাল। না হলে আমরা আবার আদালতে যাব।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, দলের তরফে এ বিষয়ে দেরি করা হবে না। আজই তাঁরা কমিশনে যোগাযোগ করবেন। প্রয়োজনে আজই আদালতে যাবে বিজেপি।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সিপিএম আদালতের দ্বারস্থ হয়। জেলায় জেলায় বিডিও বা এসডিও অফিসে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় শেষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ই-মেল করে তা পাঠানো হয়। সেই মনোনয়নপত্রকে যাতে বৈধতা দেওয়া হয়, সেই আবেদনই আদালতে জানিয়েছিল তারা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এ দিন বিচারপতি সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চে জানায়, ই-মেলে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কোনও সংস্থান পঞ্চায়েত আইনে নেই। রাজ্যের তরফেও কমিশনকে সমর্থন করা হয়। তারাও জানায়, আইনে এমন কোনও সংস্থান নেই। কিন্তু আদালত জানায়, প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করা প্রত্যেকেরই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার আছে। প্রত্যেক ভোটারেরও অধিকার রয়েছে, তাঁর পছন্দের প্রতিনিধিকে বেশি সংখ্যক প্রার্থীর ভিতর থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ। এটাই গণতান্ত্রিক নীতি। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মানুষের জীবন অমূল্য। কমিশন যদি ই-মনোনয়নকে মান্যতা দেয়, তা হলে নির্বাচনী সন্ত্রাস কমবে। ই-মনোনয়নকে বৈধতা দিলে তা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধাদানের এত অভিযোগও উঠবে না।
এই পর্যবেক্ষণের পর বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, গত ২৩ এপ্রিল বিকাল ৩টে পর্যন্ত যাঁরা ই-মেলে কমিশনের কাছে মনোনয়নপত্র পাঠিয়েছে তাঁদের সকলের নাম বৈধ হিসাবে প্রার্থী তালিকায় রাখতে হবে।
সিপিএমের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এর আগে জানিয়েছিলেন, জনগণ একাধিক প্রার্থীর মধ্যে এক জনকে বেছে নেয়। কিন্তু যদি মনোনয়নই পেশ করতে দেওয়া না হয়, জনগণ কাকে নির্বাচন করবেন! তাঁর প্রশ্ন, ভাঙড়ের একটি পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন পেশ গ্রাহ্য হলে, অন্য ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন? বিকাশবাবুর দাবি, প্রায় ৮০০ প্রার্থী মনোনয়ন পেশে বাধা পেয়েছেন। এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইন মতে ই-মেলে মনোনয়ন জমা দিলে তা গ্রাহ্য।
এর আগে হোয়াটস্অ্যাপে জমা দেওয়া মনোনয়নকে মান্যতা দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ভাঙড় জমি রক্ষা কমিটির করা একটি মামলায় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে ৯ জন হোয়াট্সঅ্যাপে তাঁদের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করতে হবে। এঁরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। বিচারপতি কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “এই নির্দেশের অন্যথা হলে কমিশন পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েত এলাকার নির্বাচন বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে।”
এ দিন সেই তালিকায় ই-মেলও ঢুকে পড়ল।
নির্বাহী সম্পাদক