দিলীপ রায়
: ধর্ষণ কী?
সাধারণভাবে কারও ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কার্যে অংশ নিলে তাকে ধর্ষণ বলে। তবে এখানেই ধর্ষণের সংজ্ঞা পূর্ণতা পায় না। কেউ নাবালক কিংবা নাবালিকা হলে তার ইচ্ছেতে যৌনমিলন ঘটলেও সেটি ধর্ষণ। এছাড়া ঔষধ দিয়ে কারও চিন্তা শক্তির লোপ ঘটিয়ে যৌনমিলনকেও ধর্ষণ বলে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকেও ধর্ষণের আওতায় আনা হয়। সেই সাথে ভয়-ভীতি বা চাপ প্রয়োগ করে অথবা ক্ষমতা প্রয়োগ করে মত আদায় করলেও ধর্ষণের আওতাভুক্ত হবে। তবে দেশ ভেদে ধর্ষণের সংজ্ঞায় ভিন্নতা আসতে পারে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অধুনায় এক সাক্ষাতকারে বলেন,
”যৌনতা মানুষের জীবনের একটি অন্যতম অধিকার। তবে এই যৌনতাকে বিকৃত করে উপস্থাপনই হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণের সঙ্গে যৌনতার চেয়েও ক্ষমতার বিষয়টি বেশি সম্পর্কিত। একজন যৌনকর্মীরও অধিকার আছে তিনি কার সঙ্গে যৌনকাজ করবেন আর কার সঙ্গে করবেন না। একজন যৌনকর্মী যদি ‘না’ করেন, তা মানা নাহলে তা হবে ধর্ষণ।”
ধর্ষণের ফলে কী ঘটতে পারে?
যদিও ধর্ষণ একজন ধর্ষকের জন্য সাময়িক আনন্দের বিষয় কিন্তু একটি আকস্মিক ধর্ষণ ধর্ষিতার পুরো জীবনকেই বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম ।
ডব্লিউএইচও এর মতে ধর্ষণে বিবিধ যৌন রোগ যেমন- এইডস, এইচআইভি, অনিরাপদ গর্ভপাত, আত্মহত্যার প্রবণতা, গর্ভধারণে সমস্যা, ডিপ্রেশন,
পেলভিক ইনফ্লেমেটোরি ডিজিজ, যৌন মিলনে অক্ষমতা, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতাসহ বহুবিদ সমস্যা ঘটে।
এছাড়াও ধর্ষণে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমস্যা দেখা না গেলেও পরবর্তীতে অস্থিরতা, ইটিং ডিসঅর্ডার, একা থাকতে ভয়, দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা, নিজেকে গুটিয়ে নেয়া,
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, মুড ডিসঅর্ডার, রাগ এবং সেক্সসুয়াল ডিসঅর্ডার জাতীয় নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে থাকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের সম্ভাবনা যাতে করে আরেকটি নিষ্পাপ জীবন ভীষণভাবে ঝুঁকিতে পড়ে।
ধর্ষণের কারণ কী?
ধর্ষণপ্রবণতা বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণগুলো হলো, অতৃপ্ত যৌন আকাঙ্ক্ষা, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, অশ্লীল পত্রপত্রিকা, ইন্টারনেটে অশ্লীল সাইটগুলো উম্মুক্ত করে দেয়া, কখনো কখনো বন্ধুবান্ধবরা একসঙ্গে হয়ে আকস্মিকভাবে কোনো অসহায় মেয়েকে একা পেয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার মানসিকতা, ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সুযোগ পেয়ে কোনো দুর্বল নারী বা শিশুর ওপর ক্ষমতার প্রয়োগ, নগ্নতা, পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, প্রেমে ব্যর্থতা,
ফুটপাতে অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ বইয়ের রমরমা ব্যবসা, বাংলা চলচ্চিত্রে খলনায়ক কর্তৃক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের দৃশ্য, ব্লু-ফিল্ম, ভিনদেশী টিভি সিরিয়ালের প্রভাব, মাদকাসক্ত মানুষের স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ লোপ পাওয়া,
যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নগ্ন পোস্টার, যৌন উত্তেজক মাদকের অবাধ বাণিজ্য, সিনেমায় নীল ছবি প্রদর্শন এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা ইত্যাদি ।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক বিচার না হওয়ার প্রবণতা, সুবিচারের নামে দীর্ঘসূত্রিতা, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রাজনৈতিক শক্তির কাছে বশ্যতা- এগুলোও ধর্ষকদের ধর্ষণকাজে প্ররোচিত করে তোলে বলে কারও কারও ধারণা।
এমনকি অনেকে মনে করেন, ধর্ষণের আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অভিভাকদের উদাসীনতা।
ছাত্ররা কেন ধর্ষণে জড়াচ্ছে?
সবচে অনুশোচনার জায়গাটি হচ্ছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের মতো অপরাধে ছাত্রদেরও জড়িয়ে পড়া। যেখানে তাদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কথা, উল্টো তারাই এমনতর হীন কাজটি অবলীলায় করে চলেছে! আশার শেষ আলোটুকু যেনো নিভু নিভু প্রায়!
সম্প্রতি দেশে অনেকগুলো ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের এইসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার ভয়াবহতা এখনেই শেষ নয়। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে প্রকাশিত হয়েছে, ধর্ষকদের সঙ্গে স্থানীয়জন আপসরফা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু সুস্থ সমাজ ব্যবস্থায় তো এমনটি হবার কথা নয়! বরং পুলিশের হাতে ধর্ষকদের তুলে দেওয়াই তো তাঁদের নৈতিক দায়িত্ব। যদিও শেষ পর্যন্ত দু’একজন বিবেকবান মানুষ ভিক্টিমের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন বলেই বিষয়টি আর ধামাচাপা দেওয়া সুযোগ থাকে না।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন এইভাবে,
“শিক্ষার্থীদের মানসিকতা এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, তারা এখন নিজেদের আর ছাত্র ভাবে না, বিশেষ করে রাজনীতির খাতায় নাম লেখানোর পর। আমি খুব অবাক হলাম এটা দেখে, একটা কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের মধ্যে তিনজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এরা বিভাগে শুধু নাম লিখিয়েছে, সঙ্গে ছাত্রলীগের পরিচয় জোগাড় করেছে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্য হয়ে তাদের মানসিকতা এমন হয়েছে যে তারা নিজেদের রাজা মনে করছে। এদের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি এবং ক্ষমতার মোহ। রাজনীতির ভালো কাজ এরা গ্রহণ করে না।
এই শিক্ষার্থীরা কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়, তার সীমারেখা ভুলে যাচ্ছে। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া এর থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আমাদের সময়ে অধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীরা ভয় পেত, শ্রদ্ধা করত। তখন কলেজে রাজনীতি ও মাস্তানি ছিল না। তখন নৈতিক শিক্ষা ছিল, যা এখন নেই।
সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি চলছে। যারা এসব করছে, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী পড়ে না। বঙ্গবন্ধুর বই বাড়িতে হয়তো সাজিয়ে রেখেছে, কিন্তু পড়ে না। পড়লেই তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হবে, আত্মত্যাগ করতে হবে।”
একই দিনে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী লেখেন, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখন সবাই জানে। এসব অপরাধীকে শুধু দল থেকে বহিষ্কার যথেষ্ট নয়, দরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”
তিনি অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “দেখা যায়, অপরাধীরা বিভিন্ন সময়েই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
কিন্তু এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই, সেটি হলো এই অপরাধীরা পালিয়ে গিয়ে কোথায় ছিল? আত্মীয়স্বজনের প্রশ্রয়েই ছিল। তাহলে অভিভাবকদেরও মূল্যবোধ কোথায় গেছে? অভিভাবকদের তো উচিত ছিল অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেটা তো হলো না।”
ভয়টা ঠিক এই জায়গাটুকুতে যেনো আরও বেশি করে ঝেঁকে বসে। যে অভিভাবকগণের অন্যায়ের সাথে আপোষ করবার কথা নয়, তারাই দেখা যাচ্ছে ক্ষেত্রবিশেষ অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
তাহলে সমাজের পঁচন রোধ করবে কে?
অতি সম্প্রতি নোয়াখালির বেগমগঞ্জের ঘটনা তো আরও ভয়াবহ। যেনো চারপাশের ইতিবাচক সবকিছুকে ছাপিয়ে উন্মত্ত ধর্ষণের দৃশ্যে দেশ সয়লাব হয়ে উঠছে। হঠাৎ করে এতো রকেট গতিতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্য কোনো কাহিনী আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং এখনি এদের লাগাম টেনে না ধরলে সামনে হয়তো আরও ঘোরতর বিপদ ধেয়ে আসবে।
অস্বীকার করবার উপায় নেই যে, সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ একটা প্রকট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ডিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
২০১৭ সালে ৮১৮ জন, ২০১৮ সালে ৭৩২ জন এবং ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৪৮ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। তাঁদের হিসাব মতে, ২০১৮ সালে ৪৬২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪০০ জন এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই কেবল ৫৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।
আশাংকাজনক তথ্য যে, প্রতি একলাখে ৪ জন নারী বা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। চলতি বছর গড়ে প্রতি মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১১ জন নারী।
এ বছর ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল ৭৬ জনকে। আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছিলেন ১০ জন নারী।
তাৎক্ষণিক ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় কী?
এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদে আব্রাহাম জান্নাত লেখেন, “লক্ষ্যণীয় যে ৭০% এরও বেশী ধর্ষণ ঘটে অতি কাছের জন বা পরিচিত জন দ্বারা। বাকীটা অজ্ঞাত লোক-জন। অধিকাংশ ধর্ষকই পুরুষ এবং যেকোন বয়সী নারীই ধর্ষণের শিকার হতে পারে। সেই সাথে ছেলে শিশুও। যে কোন সামাজিক ক্লাসেই এটি ঘটতে পারে। অতএব জ্ঞানই রক্ষা কবজ। প্রথমত বিষয় জ্ঞান। অতঃপর এ্যাকশন।
ধর্ষণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ধর্ষণকে প্রতিরোধ করাই টার্গেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। ধর্ষক চায় অল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষণ ঘটিয়ে নিরাপদে ভেগে যেতে। ফলে টার্গেট যদি চিৎকারচেচামেচি শুরু করে দেয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষক পালিয়ে যায়। আবার হাগু-মুতু-বমি করে লেপ্টে ফেললেও কাজ হতে পারে। সেই সাথে যৌনবাহিত রোগ যেমন এইডস, এইচআইভি, গনোরিয়া, সিফলিস ইত্যাদি যৌনরোগে আক্রান্ত ঘোষণা করা যেতে পারে ধর্ষণ রোধে।
তথাপি যদি কাজ না হয় তখন ঠান্ডা মাথায় ফাইট করার পরিকল্পনা করা। তবে আগে নিশ্চিত হতে হবে ধর্ষকের কাছে কোন অস্ত্র আছে কিনা যা প্রাণ নাশক হতে পারে।
অস্ত্র না থাকলে ধর্ষকের চোখ, কান, নাক, বুকগলার সংযোগস্থল, পেটবুকের সংযোগস্থল, বোগল তলা ইত্যাদি স্পর্শকাতর জায়গায় কষে আঘাত ধর্ষককে সহজেই কাবু করে দেয়। এতেও কাজ না হলে সরাসরি ধর্ষকের যৌনাঙ্গের বলস বা টেস্টিকেলস বরাবর আঘাত হানা– মধ্যম মানের একটি লাথিতেই যথেষ্ট হবার কথা, ধর্ষক যতই শক্তিশালী হোক না কেন সে ধরাশায়ী হয়ে যাবে।
তারপরও যদি ধর্ষণ না আঁটকানো যায় তখন অতি কাছের কাউকে জানাতে হবে। ঠান্ডা মাথায় আলামত সংগ্রহ করতে হবে।যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। অনেক সময় ডিঙ্কে ড্রাগ দিয়ে ধর্ষণ করা হয়। যার কারণে ধর্ষণের পর প্রস্রাব করা উচিত নয়। কেননা বারো ঘন্টা পর্যন্ত এর ট্রেস থাকে প্রস্রাবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করিয়ে নেয়া দরকার। ড্রাগ ব্যবহার করে ধর্ষণে ভিক্টিমের স্মৃতিভ্রষ্ট হয় এবং বাঁধা দেবারও ক্ষমতা থাকে না। ফলে প্রতিরোধের মার্কস থাকে না শরীরে। তাই ডিঙ্কস সম্পর্কে সচেতন থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সেইসাথে ধর্ষণের পর গোসল না করা, ড্রেস চেঞ্জ না করার পরামর্শ দেয়া হয়, সিমেন বা হেয়ার জাতীয় ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে।
ধর্ষিতা যদি নাও চায় আইনি লড়াই তথাপি ধর্ষণ ঘটলে ডাক্তার দেখানো অবশ্যই দরকার। এতে যৌনবাহিত রোগ ছড়ালো কিনা তা পরীক্ষাসহ প্রতিরোধমূলক নানা সেবা দেয়া হয় । সেইসাথে ইমারজেন্সি কনট্রাসেপশনও দেয়া হয় যেনো গর্ভধারণ না ঘটে। তাই সময় নষ্ট না করা জরুরী।”
এই সমস্যার সমাধান কী আদৌ সম্ভব, কীভাবে সম্ভব?
উত্তরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ এবং রাজনীতিবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান, বিভাগের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দীন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় লেখেন,
“এক. ধর্ষকদের গায়ের রাজনীতির পোশাকটি (পরিচিতি) সরিয়ে ফেলুন বা পরতে দেবেন না। তাতেই ধর্ষণের সংখ্যা ৯০ ভাগ কমে যাবে।
দুই. ইম্পিউনিটি, ‘আমি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকব, ক্ষমতাবলয়ের সঙ্গে আমার সংযোগ আছে’ এ রকম ভাবার সুযোগ বন্ধ করে দিন। আরও ৫টি ধর্ষণ বন্ধ হবে।
তিন. ক্ষমতার রাজনীতিতে স্থান করে নেওয়া নারীরা রাজনীতির সুবিধাভোগী হয়ে এই দুই শ্রেণির দুষ্কর্মে নীরব থাকবে না, তা নিশ্চিত করুন, আরও ৪টি ধর্ষণ বন্ধ হবে।
চার. বাকি যে এক ভাগ ধর্ষক, ধরা যাক, হ্যাবিচুয়াল রেইপিস্ট বা স্বভাবগত যৌন অপরাধী, তারা দুষ্কর্মের সঙ্গে সঙ্গেই ধরা পড়বে। এমনকি আক্রান্ত নারীরাই তাদের কাবু করে ফেলতে পারবে। সেটা তখনই সম্ভব হবে, যদি তাদের আস্থা জন্মায় যে দেশের মানুষ রাজনীতিকে ব্যবহারকারী গুন্ডাদের আর ভয় পাচ্ছে না।
রাজনীতিকে ঢাল বানানো ধর্ষকদের যেকোনো রকম দায়মুক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।”
এক্ষেত্রে একটি কঠিন বিচার ব্যবস্থা ধর্ষণ রোধে কার্যকরী হতে পারে। একসময় দেশে এসিড সন্ত্রাসের পরিমাণ ভয়াবহ আকারে পৌঁছে ছিল। কিন্তু সরকার এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি প্রয়োগ করায় তা এখন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তাই ধর্ষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবী।
সবশেষে বলা প্রয়োজন যে, সাম্প্রতিক এই ধর্ষণের ঘটনায় যেভাবে ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ, সুশীলসমাজ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছেন, তা গভীর অন্ধকারে যেনো এক ছটা আলোর ঝিলিক। হয়তো সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা এই ধর্ষণ নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবো।
সেই সুদিন কি বেশি দূরে?
দিলীপ রায়,
লেখক : কবি ও প্রভাষক
গণিত, এমসি কলেজ, সিলেট।
প্রতিনিধি