Home » ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই।’ সংবাদপত্রে দেওয়া এমন বিজ্ঞাপনে পাত্রীর বর্ণনায় লেখা থাকে, ‘বয়স ৩৭ বছর। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা। সন্তানহীন ডিভোর্সি। কানাডার নাগরিক এবং সেখানকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সর্বোপরি নামাজি।’

এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের পুরুষ যোগাযোগ করেন বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বরে। ১০ বছর ধরে এমন প্রতারণার জাল বিছিয়ে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী সুপার মার্কেট এলাকা থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।

এ সময় তাঁর কাছ থেকে তিনজন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোনসেট, সাতটি সিল, অসংখ্য ব্যবহৃত সিম, টাকা আত্মসাতের হিসাবের খাতা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৪৮ লাখ টাকা জমা দেওয়ার রসিদ উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, জান্নাতুলের ভুয়া বিদেশি পাত্রী সেজে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার আটটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ৭০ বছরের এক ব্যবসায়ীর এক কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করা এই নারী। তাঁর বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত জান্নাতুলকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, গত ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে মো. নাজির উদ্দিন নামে পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী জান্নাতুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিয়ের পর তাঁকে কানাডায় নিয়ে যাবেন এবং সেখানে তিনি জান্নাতুলের ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন। পরে জান্নাতুল তাঁকে বলেন, কানাডায় প্রচণ্ড শীত, তাই সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক দফায় এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন জান্নাতুল।

শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, মাধ্যমিক পাস করতে না পারলেও জান্নাতুল ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। পোশাকে ও কথাবার্তায় আধুনিকতার ছাপ থাকায় কানাডাপ্রবাসী বলে লোকজন বিশ্বাস করে বসে। ভুক্তভোগীদের গুলশান-বনানীর রেস্তোরাঁয় দাওয়াত দিয়ে আইনজীবী, দোভাষী, পিএসসহ হাজির হতেন জান্নাতুল। প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে প্রতারণা শুরু করেন তিনি। স্বামী এনামুল হাসান এই অপকর্মের সঙ্গী। ঢাকা ও এর আশপাশে এখন পর্যন্ত তাঁদের ২০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, জান্নাতুলের একটি হিসাবের খাতায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া গেছে। চারটি ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে এক কোটি টাকা।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, চক্রটির সঙ্গে জান্নাতুলের স্বামী ছাড়াও শাহরিয়ার, ফারজানা ও আবু সুফিয়ান নামে তিন ব্যক্তি জড়িত। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করা হবে। সূত্র:কালের কণ্ঠ

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *