Home » ইন্টারনেটের ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উল্লাস

ইন্টারনেটের ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উল্লাস

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর:

আলো ঝলমলে সকাল। অস্থির কিছু চোখ। মায়াভরা মুখের ছড়াছড়ি। সবাই অপেক্ষায়। কখন ফল প্রকাশিত হবে? অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। টাঙানো হল পরীক্ষার ফল। সঙ্গে-সঙ্গে উল­াসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। হাসি-গানে মুখরিত হয়ে ওঠে স্কুল আঙ্গিনা। প্রচন্ড বৃষ্টি কিংবা গ্রীষ্মের উত্তাপ, কোন কিছুই যেন ধামাতে পারেনি তাদের। এ যেন ছিল এক মহা মিলনের মহাক্ষণ।
গত কয়েক বছর আগেও পরীক্ষার ফলাফলের দিন এমন দৃশ্য চোখে পড়ত স্কুলগুলোতে। কিন্তু এখন আর তা দেখা যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়া আর ইন্টারনেটের সুফল কেড়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীদের সেই ক্যাম্পাসের আনন্দ।
এখন আর শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানার জন্য স্কুলে যায় না। ঘরে বসেই নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে জেনে নিতে পারে নিজের পরীক্ষার ফল। রবিবার এবারের এসএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।  কিন্তু সিলেট শহরের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখে যায় শিক্ষার্থীশূণ্য ক্যাম্পাস। অন্য বছর যেখানে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ভিড় ছিল তুমুল, সেখানে এ বছর দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্র। স্কুল ক্যাম্পাসে আসা এমনই এক শিক্ষার্থী  তার কাছে সশরীরে ক্যাম্পোসে হাজির হওয়ার মধ্যে রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এসএমএস কিংবা ইন্টারনেট। যা দিয়েই রেজাল্ট দেখিনা কেন, ক্যাম্পাসে এসে রেজাল্ট দেখার মজাই আলাদা। এ আনন্দ কি আর ঘরে বসে পাওয়া যায়!’ হাতেগুনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া প্রায় সব ফলপ্রার্থীরাই এসএমএস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফল দেখে নিয়েছেন। এদিকে, স্কুল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ভিড় না থাকলে, ভিড় ছিল ইন্টারনেটের দোকানগুলোতে। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীরা নিজেরদের ফলাফল দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন। আর তাদেরকে সামাল দিতে হিমশিহ খেতে হয়েছে দোকানিদেরও। কথা হয় ফলপ্রত্যাশী এক শিক্ষার্থী সাথে। ক্যাম্পাসে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উল্টো এ প্রতিবেদকে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘কি হবে স্কুলে গিয়ে? নিজের হাতের মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই যেখানে খুশি সেখানে বসে ফলাফল জানতে পারছি। শুধু-শুধু স্কুলে গিয়ে সময় নষ্ট করা।  অন্য এক শিক্ষার্থী বলেছেন আরও চমকপ্রদ কথা। তার মতে, ‘এই যুগে স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট দেখে বোকারা। ঘরে বসে যেখানে রেজাল্ট দেখা যা, সেখানে স্কুলে যাওয়ার কি প্রয়োজন।’ ক্যাম্পাসে যে একেবাইরে কেউ আসেনি সেটা বলা চলে। অভিভাবক  ভিন্ন মত দিয়ে বলেছেন, ‘ঘরে বসেই যখন ফল পাওয়া যাচ্ছে, তখন আর স্কুলে গিয়ে লাভ কি। স্কুলে না যাওয়ায় সময়ও বাঁচল, আবার যানজট আর স্কুলের জটলাজটলি থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও ডিজিটালেশনের কারণে শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই ইন্টারনেট অথবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ফল দেখতে পারছে। ফলে, শিক্ষার্থীরা এখন আর স্কুলে আসতে চায় না। তাছাড়া এখন তো ৮ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সবার হাতেই ভাল মোবাইল আছে।স্কুলগুলোতে সাংস্কৃতিক চর্চা হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে এক শিক্ষক জানান, ‘এক সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে ফলদেখে আনন্দ করত। দিনভর আনন্দে মেতে থাকতাম আমরা শিক্ষকরাও। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কারণে কোন শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে উচ্ছ্বাস করছে না।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *