Home » এইচএসসি ভর্তি: হতাশ না কি ইতিহাস

এইচএসসি ভর্তি: হতাশ না কি ইতিহাস

দিলীপ রায়: গত ২৫ আগস্ট (২০২০) তারিখে গোটা বাংলাদেশে কলেজগুলোতে ভর্তির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাথে প্রকাশিত হয় এসএসসি উত্তীর্ণ কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ফলাফলও। শিক্ষার্থীদের নিকট একটু বেশিই আকাঙ্ক্ষিত ছিল এবারের ভর্তির বিষয়টি। কারণ অন্য বছর এই কাজটি যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হতো।

১ জুলাই থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হতো উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস। কিন্তু এই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু অন্যরকম হয়ে গেছে। তবু এই দুর্যোগকালে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ, বৃত্তি প্রদান ইত্যাদি কাজগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

কোনো কোনো শিক্ষার্থী প্রত্যাশিত কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। উচ্ছ্বসিত তাদের পরিবারও। আবার যাদের একইসাথে বৃত্তি ও কলেজ দু’টোতেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, তাদের জন্য তো দিনটি ছিল সোনায় সোহাগা।

অন্যদিকে যে সকল শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় নি, তাদের বুকফাটা কাতর নিনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। তারা ভাবছে তাদের স্বপ্নটুকুই বোধহয় শেষ হয়ে গেল।

এই সময়টুকুর মধ্যে এরকম হৃদয় ভাঙা আর্তনাদের বেশ কিছু ফোন পেলাম।

তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই লেখাটুকু।

বিশ্বের সব সময়ের সেরা বিজ্ঞানীদের একজন আইনস্টাইন। তিনি কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। ফেল করার পর তিনি কিন্তু তার জীবনের গতিকে থামিয়ে দেন নি। তিনি তাঁর অদম্য মেধার জুড়ে বিজ্ঞানের জগতে শ্রেষ্ঠ স্থানটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তিনি বলেছেন, “জীবন হলো একটা বাইসাইকেলের মতো, তুমি যদি পড়ে যেতে না চাও, তোমাকে এটা চালিয়ে যেতে হবে।”

ঠিক তা-ই। থেমে যাওয়া মানেই তো গন্তব্যের পরিসমাপ্তি। অতএব কিছুতেই থামা চলবে না। বিচ্ছুরিত আলোর শেষ বিন্দু পর্যন্ত পৌঁছানোই হোক আমাদের লক্ষ্য।

বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন বিল গেটস। তিনি বলেছেন, “আমি হার্ভার্ডে পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে ফেল করেছিলাম। আমার এক বন্ধু সব বিষয়ে সেরা নম্বর পেয়েছিল। সে এখন আমার প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করে।”

তাই আমরা চাকরি নেব না কি দেবো, সেটাও কিন্তু ভাবনার বিষয়।

আমাদের অত্যন্ত কাছেরজন এডভোকেট আব্দুল হামিদ। তিনি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান নি। অথচ আজ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞা এবং পরিশ্রম আজ তাঁকে এই সম্মাননীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। থেমে যান নি বলেই তিনি হয়েছেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি।

সময় কারে, কখন, কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় তা বলা মুশকিল! এ প্রেক্ষাপটে অবশ্য স্মরণযোগ্য যে, প্রতিষ্ঠান মানুষকে বড় করে না। বরং মানুষই প্রতিষ্ঠানকে বড় করে।

কারণ, প্রতিষ্ঠান তো প্রাণহীন, জড়। এটিকে তো প্রাণ দেয় মূলত মানুষ। আমরা যে যে প্রতিষ্ঠানেই পড়ি, প্রতিষ্ঠান কিন্তু পড়া শিখে দেয় না। পড়তে তো হয় নিজেকেই।

তাই, যারা কাঙ্ক্ষিত কলেজে ভর্তি হতে না পেরে ভাবছো- সব আশা বুঝি ফুরয়ে গেল; সেই সব স্নেহের শিক্ষার্থীদের বলবো- তুমি যেখানেই পড়ো না কেনো, তোমাকে অবশ্যই পরিশ্রমী হতে হবে, আর হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। নিজের কাজটুকু ভালোবেসে মনেপ্রাণে করতে হবে। তবেই তোমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। বরং সফলতার মূলমন্ত্র তোমার পেছন পেছন ছুটবে আলাদিনের চেরাগের মতো। কারণ,

‘পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ। আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুখ।’

১৮ বছর বয়সে শিক্ষানবিশ হিসেবে জেনারেল মটরসে কাজ শুরু করা ম্যারি বারা বর্তমানে জেনারেল মটরসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, “পরিশ্রম দিয়ে একজন মেধাবীকে হারানো যায়, কিন্তু মেধা দিয়ে একজন পরিশ্রমীকে হারানো যায় না।তাই, দিন শেষে পরিশ্রমী মানুষগুলোই প্রতিষ্ঠান।”

আমাদের একজন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর কিন্তু কোনো কলেজে পড়ার সৌভাগ্য হয় নি। অথচ তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সবশেষে কোথাও চান্স না পাওয়া মনভাঙা গানের পাখিদের উদ্দেশ্যে বলি- তোমরা নিশ্চয় ক্রিকেটের বরপুত্রকে চেনো।

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো। শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের কথাই বলছি। তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় না কি ইংরেজিতে ফেল করেছিলেন। অথচ সময়ের কি বাহাদুরি দেখো! এখন ইংরেজি বইয়ের প্রথম পাঠটিই তাঁর কৃতিত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে।

সুতরাং হতাশ না হয়ে আসো ইতিহাস হই।

দিলীপ রায়,
কবি, প্রভাষক
গণিত বিভাগ, মুরারিচাঁদ(এমসি)কলেজ, সিলেট।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *