সকাল থেকে রাত- সবুজ প্রকৃতিঘেরা আর উঁচু-নিচু টিলার ভাঁজে থাকা সিলেট নগরীর গোয়াবাড়িস্থ দৃষ্টিনন্দন ওয়াকয়েটিতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। আর সেখান থেকে যেন করোনার চাষবাদ করেন এবং ফ্রি করোনা নিয়ে ঘরে ফেরেন তারা।
কারণ- সেখানে ভিড় জমানো তরুণ-তরুণীদের বেশিরভাগের মুখে থাকে না মাস্ক। আগতদের মধ্যে থাকে না কোনো সামাজিক দূরত্ব। যেন স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘণের এক অসম প্রতিযোগিতা!
সিলেট নগরীর সীমানারেখা এলাকায় তারাপুর চা-বাগান সংলগ্ন গোয়াবাড়ি এলাকার কালীবাড়ি ছড়ার উপর নির্মিত ওয়াকওয়ে এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল। সিলেটে পর্যটনস্পটগুলো করোনার কারণে এখন পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও প্রকৃতিকে সঙ্গী করতে প্রতিদিন গোয়াবাড়ির এই হাঁটাচলার স্থানটিতে ঘুরতে যান হাজারো লোক। মেতে উঠেন সেলফিবাজিতে। কিন্তু দেখা গেছে- ঘুরতে যাওয়া লোকজন করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করেন না। আর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা বেশি।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে সেখানে ঘুরতে আসেন দক্ষিণ সুরমার তানভির আহমদ নামের এক কলেজছাত্র। এসময় তিনি ও তার বন্ধুদের কারও মুখেই মাস্ক ছিলো না। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা তো এখন দেশে নাই। তাই আমরা মাস্ক পরিনি।
সিলেটসহ সারা দেশে প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর সংবাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তানভির বলেন, আমাদের এলাকায় এসব নেই।
শুধু তানভিরই নন, এখানে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীরই এমন অবস্থা। বেশিরভাগই মানেন না বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিধি। এতে করোনাভাইরাস বিস্তারের ক্ষেত্রে সিলেট দিন দিন আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে যাবে বলে মন্তব্য করছেন স্বাস্থ্যবিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, এভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন স্থান থেকে গোয়াবাড়ি ওয়াকওয়ে ঘুরতে আসায় করোনাভাইরাস বেশি ছড়ানোর শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।
হারুন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে দিনভার মানুষজন ঘুরেন, ফটো তুলেন। তবে বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। করোনাকালে এই অবস্থায় আমরা স্থানীয়রা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছি।
এ স্থানে নজরদারি বাড়াতে বা অভিযান চালাতে তিনি স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
অভিযানের বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম বলেন, অভিযান চালানোর বিষয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা করোনাকালে মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নির্দেশিত সকল স্বাস্থ্যবিধি মানতে নগরবাসীর প্রতি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাই। আমাদের এসএমপির অধীনস্থ ৬টি থানা এলাকায় প্রতিদিন দুইটি গাড়িতে মাইক লাগিয়ে প্রতিদিন এমন প্রচারণা চালানো হয়।
তিনি বলেন, যদি জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এবং পুলিশের সহযোগিতা চায় তবে আমরা সহযোগিতা করি। আর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা রাখে একমাত্র জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, বিষয়টি হতাশার, সেই সঙ্গে উদ্বেগেরও। করোনা ঠেকানোর লক্ষ্যে সিলেটে এখনও পর্যটনস্পটগুলো খুলে দেয়া হয়নি। কিন্তু এমন কিছু স্থানে লোকজন ভিড় করে ঠিকই। আর স্বাস্থ্যবিধিও মানে না। এতে সিলেটকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিবে অসচেতন মানুষেরা।
এভাবে মানুষজন স্বাস্থ্যবিধিনা মানলে সিলেটে করোনাভাইরাস দীর্ঘস্থায় হতে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করলে আসলে এদের রোধ করা যাবে না। বাইরে বেরনো লোকজন যাতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরেন সে জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট চালানোর নির্দেশনা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে এসে গেছে। সিলেটে শীঘ্রই নিয়মিত অভিযান পরিচালনা শুরু হবে এবং আর যত্র তত্র অপ্রয়োজনে ভিড় জমাকারী স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি