করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে স্থবির হয়ে পড়ে সিলেটের পর্যটনখাত। বন্ধ ছিলো হোটেল-রিসোর্ট। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়।
করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকলেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু। খুলে দেওয়া হয়েছে সিলেটের হোটেল-রিসোর্টও। তবে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের আসতে এখনও নিরুৎসাহিত করছে প্রশাসন। তবে সিলেট বিভাগের পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনকেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত করার কথা ভাবছে জেলা প্রশাসন।
যদিও সোমবার (১৭ আগস্ট) থেকে কক্সবাজারের সব পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সমাগম নিরুৎসাহিত করায় এইখাতে ব্যবসায়ীরা আরও ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে জানিয়েছেন। এখানকার হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ মাসে তাদের প্রায় পাচশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সমাগম আমরা কখনো নিষিদ্ধ করিনি। তবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নিরুৎসাহিত করেছি।
তিনি বলেন, এখনো যেহেতু করোনার প্রাদুর্ভাব রয়েছে তাই সিলেট বিভাগের বাইরে থেকে পর্যটকদের এখানে আসতে আমরা উৎসাহিত করছি না। তবে সিলেট বিভাগের পর্যটকদের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরাফেরা করেন এজন্য একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
এরআগে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের বেড়াতে না আসার আহ্বান জানায় জেলা প্রশাসন। তবে এমন আহ্বান উপেক্ষা করে গত ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে।
সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক মিষ্টু দত্ত। তিনি বলেন, গত পাঁচ মাসে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি তা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবো না। চলতি মাস থেকে হোটেল খুলেছি। কিন্তু অতিথি খুব সামান্য। এখন পর্যটনকেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। তাতে আমরা অন্তত টিকে থাকতে পারবো।
সিলেটের অন্যতম পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ। বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জাফলং, লালাখাল, সাদাপাথরসহ আরও কয়েকটি পর্যটকদের পছন্দের স্থান এই দুই উপজেলায় পড়েছে।
উপজেলা দুটির কর্মকর্তারাও পর্যটক সমাগমে এখনও নিরুৎসাহিত করলেও আগের কঠোর অবস্থান থেরকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন। তবে কেউ বেড়াতে আসলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধী মেনে চলতে হবে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা প্রশা্সনের কর্মকর্তারা। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে যাতে পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধির প্রতি খেয়াল রাখেন। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া নির্দেশনা ও শর্তাবলী না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে করা হচ্ছে জরিমানাও।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, সিলেটের বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রেরই অবস্থান গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ উপজেলার বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জাফলংয়ে প্রায় সারাবছরই ভিড় করেন পর্যটকরা। জনসমাগমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও এখনো সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন অনেকে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ সরকারি যে নির্দেশনা দেয়া আছে সেখানে পর্যটনকেন্দ্রগুলো খোলা বা বন্ধ তেমন কিছু উল্লেখ করা নেই। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হতো, যা এখনো করা হয়। তবে মাঝখানে আমরা কিছু পর্যটকদের ফিরিয়ে দিলেও বর্তমানে পর্যটকরা এসে ঘুরতে পারছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হচ্ছে। তবে এখনো আমরা কোনো পর্যটককে স্বাগত জানাচ্ছি না। আমরা এখনো তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছি।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যদি কেউ পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে আসেন তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৩৬ পর্যটককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।
এখই কথা জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন আচার্য। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে পর্যটকদের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে দেশের পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এখানে আগত পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘুরতে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জে আগত পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি না মানায় একদিনে ২০ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাও করা হয়েছে বলে জানান সুমন আচার্য।
এর আগে গত ১৮ মার্চ থেকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এবারের ঈদের সময় সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কায় স্থানীয় পর্যায়ে চাপের পরও পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলার অনুমতি মেলেনি।
প্রতিনিধি