রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে সেগুনবাগিচার প্রবেশমুখের ফুটপাতে বসে গল্প করছেন শিশু-বৃদ্ধসহ বেশ কয়েকজন। তাদের পরনে নেই নতুন জামা-কাপড়। মুখেও নেই মাস্ক। কিন্তু সবার মুখে হাসি। কোরবানির মাংসের খোঁজে তারা এখানে এসেছেন। মাংস বিলির সময় না হওয়ায় বসে আছেন। সেখান দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের কাছ থেকে কিছু আর্থিক সাহায্যও চাচ্ছেন। সেই টাকা সবাই সমান ভাগে ভাগও করে তারা।
শনিবার (১ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা ১৫ জন কোরবানির মাংসের খোঁজে বের হয়েছেন। তাদের কারও বাড়ি নেত্রকোনা, কারও বাড়ি যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কিন্তু সবাই থাকেন হাতিরঝিল আমবাগান বস্তিতে। ১২ থেকে ১টার মধ্যে মাংস বিলি হয়। তাই সকালের দিকটা কিছু নগদ অর্থ চেয়ে নিচ্ছেন মানুষের কাছ থেকে। যা দিয়ে মাংস রান্নার মসলাসহ অন্যান্য জিনিস কিনবেন। প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে ছবি তুলতে চাইলে কয়েকজন আপত্তি জানিয়ে সরে যান।
ছালেহা বেগম (ছদ্ম নাম) বলেন, ‘যেই এলাকায় থাকি সেখানে মানুষের কাছে মাংস খুঁজতে শরম লাগে। তাই এই এলাকায় এসেছি। জানি না ভাগ্যে কী আছে। মানুষ কত টাকা দিয়ে কোরবানি দেয়, আর আমরা ফকিররা রাস্তায় বসে আছি একটু মাংসের আশায়।’
নেত্রকোনা বাড়ি মফিজের (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালাই, বয়সের কারণে বেশিক্ষণ চালাতে পারি না। তেমন আয়-রোজগার হয় না এখন। আমরা তো কোরবানি দিতে পারি না। কেউ একটু মাংস দিলে সেটা দিয়ে কিছু দিন খাই আর কি।’
নানির সঙ্গে মাংস খুজঁতে এসেছেন শাহদাত হোসেন। ১০ বছরের শাহদাত বলেন, তার বাবা রিকশা চালান। মা মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। মাংস নেওয়ার জন্য সে এসেছে।
নানি রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আজকে একটু মাংস চেয়ে না নিলে কী খাবো।’
চাঁন মিয়া ও ছোকিনা বিবি, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই বেরিয়েছেন মাংসের জন্য। চাঁন মিয়া বলেন, ‘নদীর ভাঙনে গ্রামের ঘর-বাড়ি সব চলে গেছে। তাই বস্তিতে থাকি। ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে যার যার মতো চলে গেছে। মাঝে-মাঝে কিছু টাকা পয়সা দেয় ছেলে। আর নিজেও হেঁটে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এখন সবার সঙ্গে এসেছেন কোরবানির মাংস খুঁজতে।’
শারমিনের (ছদ্মনাম) বিয়ের এক বছরের মধ্যে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। কোলে একটি শিশু। তিনি বলেন, ‘স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছে। আমাদের কোনও খোঁজ-খবর নেন না। মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করি। করোনার কারণে গত কয়েক মাস তেমন কোনও কাজও নেই। তাই বাধ্য হয়ে আজ সবার সঙ্গে এখানে এসেছি। কিছু মাংস ও টাকা পাওয়া গেলে কয়েকদিন শিশু সন্তানের দুধ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।’
তারা জানান, মাংস বেশি পেলে এলাকার একটি হোটেলে কিছু মাংস বিক্রি করবেন। কারণ, তাদের ঘরে তো ফ্রিজ নেই যে মাংস রাখবেন। তাছাড়া মাংস বিক্রি করে কিছু টাকা পেলে অন্য জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। খালি মাংস তো খাওয়া যাবে না। ভাতও খেতে হবে।
আলেয়া (ছদ্ম নাম) বলেন, ‘ঘরে তো ফ্রিজ নেই। আর এখন অন্য কারও ফ্রিজেও রাখা যাবে না। সবার ঘরেই এখন মাংস থাকবে। তাই বেশি মাংস পেলে কিছুটা পরিচিত একটা হোটেলে দিয়ে দেবো। তারা কিছু টাকা দিলে তা দিয়ে চাল-ডাল, তেল কিনতে পারবো।’আলেয়ার মতো একই আশা রহিমার। যদি বেশি মাংস পাওয়া যায় তাহলে কিছুটা বিক্রি করে দেবেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
বার্তা বিভাগ প্রধান