করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট না বসাতে পরামর্শ দিয়েছিল করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তার পরও ঢাকায় বসানো হয়েছে পশুর হাট।
এবার একটি স্থায়ী হাট ছাড়াও ১৬টি অস্থায়ী হাট বসিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এদিকে পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলা হলেও কোনো হাটেই দেখা যায়নি ন্যূনতম পদক্ষেপ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পোস্তগোলা, গোপীবাগ বালুর মাঠ, সাঈদনগর ও গাবতলী পশুর হাটে সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পশুর হাটগুলোয় এরই মধ্যে কোরবানির গরু তুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতা টানতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইজারাদাররা। তবে হাটগুলোয় এখনো ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের লোক ছাড়া ক্রেতাদের দেখা তেমন মেলেনি। যাঁরা হাটে আছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানার ব্যাপারে কারোরই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। জীবাণুমুক্ত করার উপকরণ তো দূরের কথা, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। নেই পশুর হাটের আশপাশে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। নেই তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থাও। তবে হাট জমে উঠলে এসব ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা।
পোস্তগোলা, গোপীবাগ বালুর মাঠ, ভাটারার সাঈদনগর এবং গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ক্রেতাশূন্য হাটে নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পশুর খাবারের ব্যবস্থা করছেন শ্রমিকরা। কেউ ব্যস্ত হাটের অবকাঠামো ঠিক করতে। আর আজ শনিবার এবং আগামীকাল রবিবার ঢাকার বাইরে থেকে পর্যাপ্ত পশু হাটে আনা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাশূন্য অবস্থায়ও পশুর দাম বেশ হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হাটগুলোয় ভারতীয় গরু খুব একটা চোখে পড়েনি। দেশি গরুই উঠানো হচ্ছে। করোনা নিয়ে ভয়ে না থাকলেও পশু বিক্রি নিয়ে ভয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা।
কুষ্টিয়া থেকে গতকাল সকালে তিনটি গরু নিয়ে পোস্তগোলা হাটে এসেছেন জসিম উদ্দিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবছরই এই হাটে গরু নিয়ে আসি। আমরা গেরাম থাইক্যা আইছি। ওই হানে করোনাটরোনা নাই। করোনা নিয়া ভয়ও পাই না।’
গোপীবাগ বালুর মাঠে পশু নিয়ে আসা গাইবান্ধার কামরুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার তিনি ছোট ২০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। কোরবানির বাজার শেষ হওয়ার পর পর্যন্ত এই জায়গার জন্য তাঁকে দিতে হবে ৪৬ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কারণে এখন গরুর দামও বেশি রাখতে হচ্ছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিনি ছোট আকারের দুটি গরু এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। রাতে আরো বড় ৩০টি গরু আসবে।
পোস্তগোলা শ্মশানঘাট বালুর মাঠ হাটের ইজারাদার মইন উদ্দিন চিশতী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা জীবাণুরোধক ব্যবস্থা রাখছি। যেসব গেট দিয়ে ক্রেতারা প্রবেশ করবে সেখানে স্প্রে করে ক্রেতাদের ঢুকতে দেওয়া হবে। আমরা ১০ হাজার মাস্ক রাখছি। যেসব ক্রেতা মাস্ক ছাড়া হাটে আসবে তাদের এই মাস্ক দেওয়া হবে। এ ছাড়া গরু বিক্রেতা ও গরুর সঙ্গে আসা লোকজনকেও মাস্ক দেওয়া হবে।’
সাঈদনগর পশুর হাটের ইজারাদার ইকবাল হোসেন খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো হাটে ক্রেতা নেই। তবে বিক্রেতারা গরু নিয়ে আসা শুরু করেছেন। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা বাধ্য। এই ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে পশুর হাটের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে উত্তর সিটির ১০ সদস্যের কমিটি মনিটরিং শুরু করেছে। গতকাল ডুমনির বাস্তুল, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা এবং উত্তরার বৃন্দাবন- এই তিন হাট পরিদর্শন করেছেন কমিটির সদস্যরা।
পরিদর্শন শেষে কমিটির সদস্য ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসহাক মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইজারাদারদের সতর্ক করছি আমরা। স্বাস্থ্যবিধি কোনোভাবে উপেক্ষিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী রবিবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ হাট পরিদর্শন করা হবে। কোনো ব্যত্যয় হলে জরিমানাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ
প্রতিনিধি