Home » মুক্ত গণমাধ্যম দিবস যখন মিয়ানমারের কারাগারে

মুক্ত গণমাধ্যম দিবস যখন মিয়ানমারের কারাগারে

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: ‌

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সাংবাদিকতার অপরাধে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেই।  প্রবেশগম্যতা না থাকায় কেউ কেউ সুযোগই পাননি অনুসন্ধানের। কেউ কেউ রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা-নির্যাতনের কথা তুলে আনতে গিয়ে আটক রয়েছেন কারাগারে। এই বাস্তবতায় ‘মুক্ত গণমাধ্যম দিবসই যেন সেখানকার কারাগারে বন্দিত্বের কবলে পড়ছে। প্যারিসভিত্তিক সাংবাদিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের ১৮০টি দেশের তালিকায়  মিয়ানমারের অবস্থান এখন ১৩৭ নম্বরে। গত বছরের তুলনায় ছয় ধাপ পিছিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ বলছে, সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রয়েছে হুমকির মধ্যে। হুমকির মুখে পড়েছে স্বাধীন ও সমালোচনামুলক সংবাদের পরিসর। এইচআরডব্লিউ বলছে, গত বছর ডি ফ্যাক্টো সরকারের নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক উত্তোরণের চেষ্টা হলেও মিয়ানমার সরকার সাংবাদিকদের আটক ও বিচার প্রক্রিয়া জোরালো করেছে। সামরিক জান্তা সরকারের সময়ে সাংবাদিকেরা যে সমস্ত হুমকির মুখে পড়তেন এখনও তারা একই ধরণের হুমকির মুখে পড়ছেন: তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, জেলে পোরা হচ্ছে, বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। পাঁচ মাস ধেরে জেলে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওয়ের প্রসঙ্গে ওই মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা প্রশ্ন তুলেছে, তাদের অপরাধ কী? রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের পরিচালিত সহিংসতা উন্মোচনের কারণেই তাদের কারাগারে থাকতে হচ্ছে বলে মনে করছে তারা। এইচআরডব্লিউ-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই সাংবাদিক যে অপরাধ উন্মোচন করেছিলেন সম্প্রতি সেই অপরাধের ঘটনায় কয়েক সেনা সদস্যকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ও সহযোগিতা করায় দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটাই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সাজা। আর ওই সাংবাদিকেরা এখন দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের হুমকির মুখে রয়েছেন। কারণ পুলিশের নিজেদের দেওয়া কিছু নথি ওই সাংবাদিকেরা নিয়েছিলেন। তাদের বিগত রিপোর্টিংয়ের কারণে শাস্তি দিতে প্রতারণা করে এসব নথি তাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। এখন এই দুই সাংবাদিক কোনও জামিন ছাড়াই আটক রয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় তাদের পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। সাংবাদিকদের আটকানোর জন্য অন্য আরেকটা পথ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন। এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে টেলিকমিউনিকেশন আইনের ৬৬ (ডি) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ধারায় অনলাইনে মানহানি করাকে অপরাধ বলে গণ্য করে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এইচআরডব্লিউ-এর মতে বিচার করাই সেখানে একমাত্র হুমকি নয়। সম্প্রতি দেশটির একমাত্র পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক এসথার তুসানকে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। অং সান সু চির দেওয়া একটি বক্তব্যের ভুল অনুবাদ সংবলিত সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরে ওই সংবাদ ঠিক করা হলেও সরকারের সমালোচনামুলক সংবাদ করা তুসানকে নিয়মিত হুমকি পেতে থাকলেন। তাকে নিয়মিত ফলো করা হতে থাকলো। রাষ্ট্রায়ত্ব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা এক নিবন্ধে তাকে ‘অশুভ আত্মা’ আখ্যা দেওয়া হলো। ফ্রিডম এক্সপ্রেশন মিয়ানমারের প্রকাশিত স্থানীয় সংস্থার দেশজুড়ে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে সাংবাদিকেরা কম নিরাপদ বোধ করছেন, সংঘাত কবলিত এলাকায় খবর সংগ্রহ করার সামর্থ্য হারাচ্ছেন, যার কারণে সরকার খবর ব্লাকআউট করতে সক্ষম হচ্ছে হয়ে পড়ছে। আর সরকার তা অস্বীকার করছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, মিয়ানমার সরকার মুক্ত, স্বাধীন ও সমালোচনামুলক সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাদের সত্যিকার সদিচ্ছা পোষণ করছে না। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থাকায় অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের সাংবাদিকদের নিরব রাখতে, ভুয়া বিচার ঠেকাতে, ব্যবহৃত আইন সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনা তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বেসামরিক সরকারের নেতৃত্ব তাদের ক্ষমতা ব্যবহারে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটা এখনই শুরা করা দরকার।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *