দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বাদ জোহর রাজধানীর কুড়িলে যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামর তত্ত্বাবধানে তার গোসল সম্পন্ন করা হয়েছে। জানাজার পরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
এরপর বনানী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার লাশ দাফন করা হবে। সোমবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুব নুরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
এর বাইরে চীনের ৩টি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।
১৯৪৬ সালে নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। মায়ের নাম জমিলা খাতুন।
তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার তিন মেয়ে- সোনিয়া ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।
যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান।
২৫ বছর বয়সে তিনি দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। একজন সাহসী ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের।
সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন শিল্প খাতের এই সফল ‘আইকন’।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন দুর্নীতি ও ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে সাহসী এই কণ্ঠস্বর।
একে একে গড়ে তোলেন ৪১টি সফল শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অন্যায়ের কাছে জীবনে কখনও মাথানত করেননি। রক্তচক্ষুর ভয়ে কখনও ভীত বা একচুলও পিছপা হননি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই ছিল যার স্বপ্ন। বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন সেই স্বপ্নবাজ মানুষটি।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এছাড়া তার মৃত্যুতে যুগান্তর পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প খাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় অসময় চলে গেলেন তিনি।
সূত্র:যুগান্তর
প্রতিনিধি