Home » সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগঃ ফলিক দুর্নীতিবাজ

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগঃ ফলিক দুর্নীতিবাজ

সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক দুর্নীতিবাজ, শ্রমিক স্বার্থপন্থি কার্যকলাপে লিপ্ত ও সংগঠনের অর্থ-আত্মসাৎকারী। এসব অনিয়মের কারণেই তাকে সংগঠনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের ২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শ্রমিকরা তার কাছে হিসেব চাইলে তিনি বারবার কালক্ষেপন করেছেন। নানা টালবাহানা করে তিনি শ্রমিকদের অর্থ নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন। করোনার দুঃসময়ে এবং ঈদকালীন শ্রমিকরা সংগঠনের কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা চাইলেও তিনি শ্রমিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এসব কারণে তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের সর্বস্তরের শ্রমিকরা ফুঁসে ওঠেন। ৬০ শতাংশ শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরি পরিষদের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানান শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম। পাশাপাশি কার্যকরি সভাপতি মো. রুনু মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২৬ নম্বর ধারামতে সংগঠন বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায় এবং দুর্নীতি ও প্রতারণা করে শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগে ফলিক সাহেবকে বহিষ্কার করা হলো।

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মুহিম আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আহমদ ফলিক সুকৌশলে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদটি দখল করে ছিলেন। বারবার তার কাছে সংগঠনের হিসেব চাওয়া হলেও তিনি তা দেননি। কখনও সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ, কখনও তার ব্যক্তিগত অসুবিধা। এরই মাঝে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন রফিক মৃত্যুবরণ করেন। তার শূণ্যপদে ২৩ মার্চ থেকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পড়ে আমার ঘাড়ে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নানারকম অনিয়মের তথ্য ধরা পড়ে। দেখা যায় শ্রমিকদের টাকা সেলিম আহমদ ফলিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনোয়োগ করেছেন। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে, নিজের ছেলে আমিরুল ইসলাম লিমনের নামে গত ২১ জুলাই ১২ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের টাকা নিজের ব্যক্তিগত কাজে ও ভাতিজির বিয়ের কাজে ব্যবহার করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনোয়োগ করেছেন। নগর এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগঠনের অনুমোদন লাভের জন্য দেয়া ৫ লাখ টাকাও তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেননি।

গত ২৩ মে করোনা মহামারীর কারণে অসহায় পরিবহন শ্রমিকদের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খাদ্যসামগ্রী প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের সাথে ফোনে কথা বলেন শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা কমিটির সাবেক সদস্য ও মিতালী শ্রমিক উপ-কমিটির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। ফলিক সাহেবকে ৬৩ শাখার শ্রমিকদেরকে সেমাই-রুটি দেওয়ার কথা বললে তখন তহবিল থেকে সাহায্য দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। ফোনে তিনি শ্রমিক নেতাকে গালিগালাজও করেন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মিলে গত ২ জুন ফলিকের কাছে সংগঠনের তহবিলের হিসাব চান। কিন্তু তিনি সংগঠনের বর্তমান কমিটির দায়িত্বপালনের ২৯ মাসের মেয়াদে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকার হিসেব যথাযথ আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতে পারেননি। মাত্র ৪১ লাখ টাকার হিসেবে দিতে সমর্থ হন। বাকি টাকার কোনো হিসেব তিনি দেখাতে পারেননি। এমন খবরে শ্রমিকরা আরও অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। সেলিম আহমদ ফলিককে বিষয়টি সমাধানের জন্য বারবার বসার জন্য তাগদা দেওয়া হয়। পরে তিনি চাপের মুখে ১৪ লাখ টাকার ক্যাশ ব্যাংকে জমা দেন। আরও তিনটি চেকে ১৫ লাখ করে ৪৫ লাখ টাকা দেন কিন্তু পরবর্তিতে চেকগুলো ডিজওনার হওয়ায় সে টাকা উত্তোলন করা যায়নি। পরবর্তিতে সহ-সভাপতি জামাল সাহেবের মধ্যস্থতায় ২ জুন বসার দিন নির্ধারিত হয়। কিন্তু তিনি সেদিন বসেননি। এরপর ২ জুন ফলিক সাহেব জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় দখল করার পায়তারা চালান। এতে শ্রমিকরা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেছিলেন। এতে ফলিক সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকদের উপর ছেলের রোকন আল সামীর নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী নিয়ে শ্রমিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হন।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ ২৯ মাস। এই ২৯ মাসে আমাদের সংগঠনের মোট তহবিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা হয়। এর সাথে আরও ৪৫ লাখ টাকাও রয়েছে যা ব্যাংক থেকে চেক ডিজওনার হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের তহবিলের টাকা পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু এরমধ্যে তার কাছ থেকে মাত্র ৪১ লক্ষ টাকার হিসেব বুঝে পেয়েছি। বাকি অর্থের কোন হিসেব বুঝে পাইনি। সেলিম আহমদ ফলিক দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের পরিশ্রমের রোজগার থেকে করা স য় লুটপাট করেছেন। নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করেছেন। যা কোনোভাবেই আমরা প্রত্যাশা করিনি। এসব কারণেই আমরা তাকে সংগঠনের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছি। তাকে বহিষ্কারের পর বিষয়টি ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুনু মিয়া, সহ-সভাপতি মো. শাহজামাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল হাছনাত, প্রচার সম্পাদক মো. সোনাফর আল, কোষাধ্যক্ষ মো. সামছুল হক মানিক, মেম্বার হারিছ, আতিক ও মেম্বার বেলাল।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *