Home » শ্রমিক নেতা হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

শ্রমিক নেতা হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্টে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ রিপন নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে আন্দোলন চলছে।

শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আন্দোলনের পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে যোগাযোগ করছেন। ইতিমিধ্যে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুনু মিয়াসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একাত্মতা পোষণ করেছেন।

আন্দোলনকারী শ্রমিকরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, ইন্ধনদাতা রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার আলী আকবরকে গ্রেফতার ও প্রত্যাহারের দাবী জানান।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমা বাবনা পয়েন্ট, চন্ডিপুল পয়েন্ট, পারাইরচক, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, শেরপুর সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা। এতে করে হাজার হাজার গাড়ী আটকে পড়ায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।

শ্রমিক নেতা রিপনকে যে কারণে হত্যা করা হলো:

গত ২৭ রমজান বাবনা পয়েন্টস্থ রেলওয়ের সাধুরবাজার সংলগ্ন যমুনা ওয়েল ডিপোর পাশে রয়েছে ট্যাংকলরির সদস্য মো. ইউনুস মিয়ার তেল বিক্রির একটি দোকান। তেলের লরি থেকে দ্বিতীয় দফা তেল বিক্রিকালে বরইকান্দি এলাকার এজাজুল, রিমু, মুন্নার নেতেৃত্বে ৭/৮জন সন্ত্রাসী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রথমে টাকা দাবী করে। টাকা না দেওয়ায় তারা ইউনুস মিয়া ও তার শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দোকানের ক্যাশে থাকা তেল বিক্রির প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ইউনুস মিয়া বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত ঘটনায় বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ রিপন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করলেও আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি।

এনিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ঈদ ও করোনার জন্য আন্দোলনের কোন কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশকে অবগত করার পরও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমির আলীসহ শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করে বলেন, উক্ত ঘটনার জের ধরে সন্ত্রাসী এজাজুল, রিমু, মুন্নার নেতেৃত্বে ১০/১২জন সন্ত্রাসী রিপনের উপর হামলা করে। রাত প্রায় ১০টার দিকে সাধারণ সম্পাদক রিপন যমুনা ওয়েল ডিপো সংলগ্ন তার দোকান বন্ধ করে সাথে থাকা তার এক সহযোগী বাবলা মিয়াকে নিয়ে পিরোজপুর রোডস্থ পূর্ব খোজারখলাস্থ বাসায় ফিরছিলেন, তখন বাবনা পয়েন্টস্থ আসা মাত্র সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা করে। এতে ধারালো চাকুর আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে রিপন মাটিতে লুটে পড়েন। সাথে থাকা বাবলা এগিয়ে এলে তিনিও গুরুতর আহত হন। তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে তাৎক্ষনিক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে যাওয়া মাত্র কর্তব্যরত ডাক্তার রিপনকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর দিকে গত ১লা জুলাই রেলওয়ে প্রকৌশলী আলী আকবরের নেতৃত্বে ট্যাংক লরি রাখা নিয়ে যমুনা ডিপোর সামনে শ্রমিকদের উপর হামলা করা হয়। এতে শ্রমিকরা আহত হন। শ্রমিক নেতা রিপন নিহত হওয়ার সংবাদ শুনে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে বাবনা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত প্রায় ১১টার দিকে চন্ডিপুল পয়েন্টে গিয়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমির আলীসহ শ্রমিক নেতারা আরো অভিযোগ করে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনার পর যদি সন্ত্রাসীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতো তাহলে আজ এই খুনের ঘটনা হতো না। দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ খাইরুল ফজলকে বার বার বলার পরও তাদেরকে গ্রেফতার করেনি। পুলিশের সহযোগীতায় সেই ছিনতাইকারীরা নানা অপকর্ম করছে প্রতিদিন। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, ইন্ধনদাতা রেলওয়ের প্রকৌশলী আলী আকবরকে গ্রেফতার ও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবী জানান।

তারা বলেন, রেলওয়ের প্রকৌশলী আলী আকবরের ইন্ধন রয়েছে। তাই আলী আকবরকে গ্রেফতারের জোর দাবী জানান শ্রমিক নেতারা।

এ ব্যাপারে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার বলেন, আমার এক শ্রমিক ভাই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে। আমরা শ্রমিক সংগঠন এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সাথে সাথে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবী জানাচ্ছি। অতিসত্বর দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে সারা সিলেট বিভাগ জুড়ে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলেও হুশিয়ারী প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ খাইরুল ফজলের সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইলে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *