আয়েশা আক্তার সাদিয়া। মাত্র চার মাস হলো পৃথিবীর আলোয় এসেছে। এইটুকুন শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ব্লেড দিয়ে গলা কেটে হত্যা করল এক নারী। শিশুটির বাবা-মায়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে এমন নির্মম কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাদেরই এ নিষ্ঠুর প্রতিবেশী। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। ঘটনার স্থান রাজধানীর আদাবর আর পশুমনা মানবীর নাম পারভিন আক্তার। তাকে গত ৫ জুলাই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উত্তর আদাবর ৩৮/১০ একটি বাসা থেকে গলাকাটা অবস্থায় শিশু সাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পারভিনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ জানান, ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে উঠে আসে প্রতিবেশী পারভিন আক্তারের সঙ্গে নিহত শিশু সাদিয়ার বাবা শাহজাহান ও মা মুর্শিদা বেগমের পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিষয়। ঘাতক পারভিন বলেছেন, তার দুই সন্তান সাদিয়াদের ঘরে গেলে গালিগালাজ ও মারধর করতেন সাদিয়ার মা। তা ছাড়া দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। এসব কারণেই প্রতিশোধ নিতে সাদিয়াকে খুন করেন পারভিন।
ডিসি হারুন আরও বলেন, ওই ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, প্রযুক্তি সহায়তা ও গোপন সূত্রের ভিত্তিতে গত ৫ জুলাই পারভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাদিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। সাদিয়ার পরিবার ও হত্যাকারী গৃহিণী পারভিনের পরিবার নিম্নবিত্ত। খুনি ৫ মাস আগে ঢাকায় আসেন। তার স্বামী একজন রিকশাচালক। সাদিয়ার বাবা একজন দিনমজুর ও দাদা বস্তির ম্যানেজার। পারভিনের স্বামীকে বাসার সামনে সাদিয়ার দাদা দোকান করতে না দেওয়ায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল।
এ ছাড়া পারভিনের দুই বছর ও চার বছরের দুটি সন্তান সাদিয়াদের বাসায় গেলে তার (সাদিয়ার) বাবা-মা তাদের মারধর করতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও শত্রুতার সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা করতে না দেওয়া, সন্তানদের গালিগালাজ ও মারধর করার কারণে পারভিন সাদিয়ার মাকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন সাদিয়ার মা তাকে ঘুম পাড়িয়ে রান্না করতে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরে ঢুকে ব্লেড দিয়ে গলা কেটে সাদিয়াকে হত্যা করেন পারভিন। তিনি একাই এটি ঘটিয়েছেন। পারভিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘর থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ব্লেডটি উদ্ধার করা হয়। খুব দ্রুতই এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র: আমাদেরমসয়
প্রতিনিধি