বাবা মা দু’জনেই দীর্ঘ দিন ধরে বলিউডের অংশ। নিজে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ক্যামেরার পিছনে। পরে নায়ক হয়েছেন কিছু সিনেমায়। কিন্তু তাঁর নাম ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচিত হওয়ার তুলনায় সমালোচিত হয়েছে অনেক বেশি। তিনি সুরজ পাঞ্চোলি।আদিত্য পাঞ্চোলি এবং জারিনা ওয়াহাবের ছেলে সুরজের জন্ম ১৯৯০-এর ৯ নভেম্বর। ‘গুজারিশ’ এবং ‘এক থা টাইগার’ ছবিতে তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালনার দায়িত্বে। ২০১৫ সালে প্রথম অভিনয়।
সালমান খানের প্রয়োজনায় সে বছর মুক্তি পায় ‘হিরো’। দ্বিতীয় ছবির জন্য অপেক্ষা চার বছর। ২০১৯-এ মুক্তি পায় ভারতীয় সৈনিকের জীবনের উপর ভিত্তি করে ‘স্যাটেলাইট শঙ্কর’। পাশাপাশি কাজ করেছেন মিউজিক ভিডিও-তেও।
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত হওয়ার আগেই বিতর্কিত তকমা পেয়ে যান সুরজ। ২০১৩ সালের ৩ জুন রহস্যজনক মৃত্যু হয় সুরজ তৎকালীন বান্ধবী জিয়া খানের। ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয় জিয়ার। চার দিন পরে তাঁর বোন ছপাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছিলেন।
সেখানে নিজের মৃত্যুর জন্য প্রেমিক সুরজকে দায়ী করেছিলেন জিয়া। ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, সে সময় সুরজ-জিয়া লিভ ইন করতেন। গুঞ্জন, সুরজের চাপে গর্ভপাত করাতে বাধ্য হয়েছিলেন জিয়া। ফলে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ‘নিঃশব্দ’-এর নায়িকা।তাঁর মৃত্যুরহস্য নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়। জিয়া-র পরিবারের প্রথম থেকেই দাবি ছিল, জিয়া আত্মঘাতী হননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। তাঁদের ইঙ্গিত ছিল সুরজ পাঞ্চোলির দিকেই।
মামলা শুরু হওয়ার পরে বম্বে হাইকোর্ট জামিন দেয় সুরজকে। পরের বছর জিয়ার রহস্যমৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি হয়। তবে সিবিআই খুনের সম্ভাবনা খারিজ করে দেয়। তবে এতে হাল ছাড়েননি জিয়ার মা রাবিয়া খান।
নিজের উদ্যোগে ব্রিটিশ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করেন রাবিয়া। তাঁরা এই মৃত্যুকে নিছক আত্মহত্যা বলতে চাননি। ২০১৮ সালে ঘুরে যায় ঘটনার মোড়। ৬৯ জন সাক্ষীর তালিকা পেশ করে সিবিআই। জিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় সুরজ পাঞ্চোলিকে।
মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। যদিও সুরজর দাবি, তিনি প্রথম থেকেই তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে এসেছেন। তাঁর অভিযোগের তির জিয়ার মা রাবিয়ার দিকে। রাবিয়া আদালতে শুনানির দিন হাজির হন না বলে অভিযোগ সুরজের।
সুরজের অভিযোগ, রাবিয়ার উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার পাওয়া নয়। বরং, তাঁকে হেনস্থা করা। জিয়ার পরে এ বার সূর্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের প্রাক্তন সেক্রেটারি দিশা সালিয়ানের নাম।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রহস্যমৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়া সোচ্চার বলিউডে স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত সিংহ রাজপুত’ নামে একটি হ্যান্ডল তৈরি হয়েছে। সেখানে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে সুরজ পাঞ্চোলিকে।
ইনস্টাগ্রামের ওই হ্যান্ডলে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে শেয়ার করা হয়েছে একটি ফেসবুক পোস্ট। সেই পোস্টে কোনও সূত্র উদ্ধৃত না করেই দাবি করা হয়েছে, সুরজের সঙ্গে প্রেম ছিল সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশার। এখানেই শেষ নয়। অভিযোগকারীর আরও বক্তব্য, সুরজের সন্তানের মা হতে চলেছিলেন দিশা।
পোস্টে দাবি করা হয়েছে, সুরজ প্রেমিকার সন্তান চাননি। গর্ভপাত করিয়ে নিতে চাপ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ। কিন্তু জিয়ার মতো দিশাও নাকি গর্ভপাত করাত চাননি। সূর্যের জন্যই দু’জনকে জীবন দিয়ে মাশুল দিতে হয়েছে বলে পোস্টে দাবি করা হয়েছে।
সুরজ-দিশার সম্পর্কের ব্যাপারে সুশান্ত সিংহ রাজপুত ছাড়া নাকি বেশি কেউ জানতেন না বলে দাবি করা হয়েছে ওই ফেসবুক পোস্টে। এই ঘটনায় সুশান্তের সঙ্গে সুরজ সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি ওই পোস্টদাতার।
প্রাক্তন সেক্রেটারি দিশার রহস্যমৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সোশ্যাল মিডিয়া প্রথম থেকেই এই দু’টি ঘটনাকে নিছক সমাপতন বলতে রাজি ছিল না। চেষ্টা হয়েছে দু’টি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক খোঁজার।
সেই আবহে এই পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনও সূত্র না থাকলেও, সত্যাসত্য বিচার না করেই সুরজের বিরুদ্ধে এই দাবি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ সূর্য।
তাঁর দাবি, প্রেম তো দূর অস্ত্! তিনি দিশা সালিয়ানকে চিনতেনই না। সংবাদমাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর পড়েছেন। তাঁর সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্ক ভাল ছিল বলেও জানিয়েছেন সুরজ। যদিও ইন্ডাস্ট্রির গুঞ্জন অন্য কথা বলছে।
কাই পো চে’ সিনেমার জন্য অডিশন দিয়েছিলেন সুরজ পাঞ্চোলি। কিন্তু মনোনীত হননি। সেখানে এই ছবিতে অভিনয় করে বলিউডের সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন সুশান্ত। কর্ণ জোহরের ‘ড্রাইভ’ ছবিতেও নাকি নায়ক হওয়ার কথা ছিল সূর্যেরই। কিন্তু সেই সুযোগও শেষ পর্যন্ত পান সুশান্ত-ই। সেই ঘটনায় নাকি ক্ষুব্ধ ছিলেন সালমান খানও।
এই সব মিলিয়ে প্রথম থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল সুরজ-সুশান্তের মধ্যে। তবে সব অভিযোগের চাপানউতোর সরিয়ে সুরজ দাবি, এ সব মনগড়া কথা আদপেই সত্য নয়। আদিত্য পাঞ্চোলির পুত্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য সেখানে লাগামছাড়া এই মনগড়া দাবি করা হয়েছে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে।
এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন সুরজ। তার উপর আবার এই নতুন ভিত্তিহীন অভিযোগ।
আদিত্যর প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে যদি সুরজ। কিছু করে বসে, তার দায়িত্ব কে নেবে? পাশাপাশি, তাঁর প্রশ্ন, যদি দিশা সালিয়ান সত্যি সন্তানসম্ভবা হতেন, তা হলে কি সেই তথ্য পুলিশের কাছে থাকত না।
সুত্র: আনন্দবাজার প্রত্রিকা
বার্তা বিভাগ প্রধান