Home » সিলেটে রাজনীতিবিদদের ঘিরে ধরছে করোনা আতঙ্ক

সিলেটে রাজনীতিবিদদের ঘিরে ধরছে করোনা আতঙ্ক

সিলেটে একের পর এক রাজনীতিবিদ আক্রান্ত হচ্ছেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে। যেমন আওয়ামী লীগ তেমন বিএনপি পরিবারে। কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না প্রাণঘাতি করোনা। শুরুর দিকে সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতারা করোনায় আক্রান্ত হলেও বর্তমানে এ ভাইরাস শক্তভাবে হানা দিয়েছে বিএনপি পরিবারেও। সিলেটে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর বিএনপির আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন নেতাকর্মী। তন্মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মারা গেছেন ৫ জন নেতাকর্মী।

সিলেটে গেল ৫ এপ্রিল সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ওসমানী হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই সিলেটে কেবল বাড়তে থাকে প্রাণঘাতি করোনা। শনিবার সকাল পর্যন্ত সিলেটের ২৭৩৪ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সর্ব শ্রেণীপেশার মানুষ।
আর সিলেটের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঝে করোনা হানা দেয় গেল ১৭ মে। দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও নগরীর সুবহানীঘাটের সবজির আড়তের ব্যবসায়ী দবির মিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওই দিন রাতেই।

এরপরেই সিলেটে করোনা হানা দেয় আওয়ামী লীগ পরিবারে। শুরুতেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। ২২ মে তার শরীরে শনাক্ত হয় প্রাণঘাতি এ ভাইরাস। এর ঠিক দুই দিন পর অর্থাৎ ২৪ মে করোনায় আক্রান্ত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে সিলেটে আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুইজন নেতা করোনায় আক্রান্তের খবরে নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ভয়ভীতি।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাদেল বাসায় আইসোলেশনে থেকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হন। আর কাউন্সিলর আজাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থতা লাভ করেন।

এরপর সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হন সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরান। ২৭ মে তার শরীরে শনাক্ত হয় এ ভাইরাস। এরপরেই তার স্বামী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ আক্রান্ত হন করোনায়। ৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

সিলেটে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তন্মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দফতর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ আহমদ, জকিগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও কসকনকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ, বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, গোলাপগঞ্জের আমুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল হক, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুতফুর রহমান মাষ্টার ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মুবাশশির আলী। এর মধ্যে বদরুল হক ও লুতফুর রহমান মাষ্টার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে বর্তমানে সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন একের পর এক বিএনপি নেতা। প্রাণঘাতি এ ভাইরাস ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে দুই নেতার প্রাণ।

শনিবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিলেটের ১০ জন বিএনপি নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিএনপি নেতা দবির মিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর পরপরই এ ভাইরাস সিলেটে ছোবল মারে আওয়ামী লীগ পরিবারে। কিন্তু বর্তমানে সিলেটে করোনা শক্তভাবে হানা দিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে।

সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরীর শরীরে শনাক্ত হয়েছে করোনা। আজ শনিবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিলেট থেকে নেয়া হয়েছে ঢাকায়। তার মা-বাবাও করোনার উপসর্গ নিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এছাড়া গতকাল শুক্রবার সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান দলের চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা, সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এ টি এম ফয়েজ ও তার সহধর্মিণী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র রুকসানা বেগম শাহনাজ।

সিলেট মহানগর বিএনপির সাংঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির করোনা বিষয়ক মনিটরিং সেলের সদস্য মিফতা সিদ্দিকী জানান, এ পর্যন্ত সিলেটে ১০ জন নেতাকর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।

সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে করোনায় আক্রান্ত অন্যান্যরা হলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সহধর্মিণী ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সামা হক চৌধুরী, জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ। ইতিমধ্যে তারা দু’জনই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা আখতার হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ইসলাম উদ্দিন, মহানগর বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলাম তারা মিয়া।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *