স্টাফ রিপোটার : সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ৩নং অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের বহুল আলোচিত সমালোচিত চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল ফেসে যেতে পারেন। তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি চাঁদাবাজি ও জালিয়াতি মামলার চাজর্শিট দাখিল করা হয়েছে। বটতলা গ্রামের মৃত মুসলিম মিয়ার পুত্র নাজমুল ইসলাম রোহেলকে একমাত্র আসামি করে দণ্ডবিধি আইনের ৩৮৫ /৪৬৭ /৪৬৮ /৪১৭ /৫০৬ (২) ধারা মতে ২০১৯ সালের ২ আগস্ট মামলাটি বিশ্বনাথ থানায় দায়ের করা হয় (মামলা নং-০৪ তারিখ ০২/০৮/২০১৯ ইং)। মামলাটি দায়ের করেছেন, একই গ্রামের মৃত জহুর মিয়ার পুত্র রোকন মিয়াজি। বাদি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, অলংকারী ইউনিয়নের বড় খুরমা গ্রামের মৃত আছলম আলীর পুএ হারুণ মিয়া উরফে ইরণ মিয়ার পনাউল্লাহ বাজারের বড় খুরমা মৌজার জেএল নং-৩৭ এসএ খতিয়ান ৯১২ এসএ দাগ নং ৪৮১৪,৪৮১৫ ভূমিতে নির্মিত ২২ নং দোকানটি ২৪/০১/২০১৭ ইং তারিখে ৬/০১/১৭ ইংএর মাধ্যমে আমোক্তার নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে দোকানের মালিক হারুণ মিয়ার বাবা আছলম আলী অসুস্থ হলে হারুন মিয়া যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসেন। এসময় অলংকারী ইউনিয়নের নির্বাচন ছিল। নির্বাচনে নাজমুল ইসলাম রোহেল চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ায় হারুন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার কাছ থেকে নির্বাচনী ব্যয় মিটাতে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। হারুন মিয়া এত টাকা দিতে অস্বীকার করায় চেয়ারম্যান রোহেল তাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার হুমকি দিয়ে ফিরে আাসেন। ২০১৭ সালের ১৮ ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আসামী রোহেল মামলার বাদি ও দোকানের মালিক হারুণ মিয়ার বড় ভাই শিব্বির আহমদের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং ৮৪২) দায়ের করেন। থানা পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধি ১০৭/১১৭ ধারা মোতাবেক নন এফআইআর নং-১৩ বিশ্বনাথ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে দাখিল করেন। এক পর্যায়ে হারুন মিয়ার পনাউল্লাহ বাজারের বর্নিত ২২ নং দোকান ঘরটি বিক্রি করা হয়েছে মর্মে চেয়ারম্যান রোহেল একটি ভুয়া ও জাল দলিল সৃষ্টি করে আদালতে ফটোকপি দাখিল করেন। আদালত দোকান খরিদের মূল দলিল দাখিলের বার বার নির্দেশ দিলে ও চেয়ারম্যান দলিল দাখিল না করায় আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। পুনরায় চেয়ারম্যান রোহেল দলিলের মূল কপি হেরে গেছে মর্মে ২৬/০২/২০১৭ ইং তারিখে বিশ্বনাথ থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নং ১২৬২) দাখিল করেন। দোকানের বিষয়টি নিয়ে পনাউল্লাহ বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিলে বিশ্বনাথ থানা সদরে ও সিলেটের মুরব্বিদের নিয়ে এক সালিশ বৈঠক হয় এবং ০৪/০৩/২০১৭ ইং তারিখে চেয়ারম্যান রোহেল সেই জাল দলিলটি দাখিল করেন। ০৫/১২/২০১৭ ইং তারিখে হারুন মিয়া পুনরায় দেশে আসলে চেয়ারম্যান এর ভয়ে প্রাণ রক্ষার্থে যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান এবং তার বড় ভাই শিব্বির আহমেদ সিলেট চলে যান।
সালিশ বৈঠক থেকে নানা অজুহাতে চেয়ারম্যান সরে যান। মামলা দায়েরের পর বিশ্বনাথ থানা পুলিশের কর্মকর্তা ও উর্ধতন একজন কর্মকর্তা মামলাটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পান। সব শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রতনা বেগম ঢাকা পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) সিআইডি বরাবরে আসামী রোহেলের সৃষ্ট জাল দলিল ও হারুন মিয়া উরফে ইরন মিয়ার স্বাক্ষরিত মূল দলিল ঢাকায় প্রেরন করলে দোকানের ক্রেতা হারুন মিয়ার স্বাক্ষর জাল প্রমাণিত বলে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। যে কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা আাসামী রোহেল এর বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৪৬৭ /৪৬৮/৪৭১ /৫০২ (২) ধারা মতে আাদালতে অভিযোগ পএ দাখিল করেন। (অভি্যোগ পএ নং-৭০, তারিখ ২৭/০৩/২০২০ ইং)। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা এজহারের ৩৮৫ ধারাটির চার্জশিট থেকে বাদ দেন। বাদি পক্ষের অভিযোগ আসামির সাথে আতাঁত করে পুলিশ স্বাক্ষ প্রমাণাদি পাওয়া সত্ত্বেও আসামিকে রক্ষার জন্য ধারাটি বাদ দেয়। বাদি রোকন মিয়াজি অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বনাথ থানার ওসি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রথমে সকল ধারায় চার্জশিট দেওয়ার কথা বললেও ওসির সাথে আসামী রোহেলের যোগাযোগ ও সম্পর্ক থাকায় ধারাটি বাদ দেয়া হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন বাদিপক্ষের যারা স্বাক্ষী দিয়েছেন তাদের নাম বাদ দিয়ে আসামী পক্ষের স্বাক্ষীদের নাম দেয়া হয়েছে। আদালতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদি নারাজি দাখিল করবেন বলে ও জানান। বলা আবশ্যক যে চার্জশীটটি অনুমোদন হলে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ ৩৪ এর (১) মতে সাময়িকভাবে চেয়ারম্যান বরখাস্ত হতে পারেন।