প্রাথমিকে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও তার সঠিক বাস্তবায়ন নির্ভর করে সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম পরিচালনার উপর। কিন্তু বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা ও অদক্ষতা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদন্ড প্রায় ভেঙে দিয়েছে। এই ভঙ্গুর প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার্থী গড়ে তোলা অনেকটাই অসম্ভব।
শিক্ষা জাতির উন্নতির চাবিকাঠি। প্রাথমিক শিক্ষা হলো এর ভিত্তি। শিশু শিক্ষার অন্যতম সমস্যা শিক্ষক সংকট, পদোন্নতি ও বৈষম্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এক নতুন দিক উন্মোচন করেছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রাথমিকে প্যানেল পদ্ধতি বিদ্যমান ছিল যার কারণে ঐ সময়টাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক সংকট ছিল না। কিন্তু এর পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে এবং তা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুলোর শিক্ষক সংকটের একটি প্রধান কারণ হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা। একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষক পদায়ন করতে লেগে যায় ২ বছর বা তার চেয়ে অধিক সময়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় এ সময় গুলোতে প্রাথমিকে নতুন করে আরও অধিক শূন্যপদের সৃষ্টি হয়। যার কারণে শূন্যপদ পূরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক পদায়ন করলেও শিক্ষক সংকট থেকেই যাচ্ছে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, ২০১৮ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ৩০ জুলাই,২০১৮ সালে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার সময় প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য ছিল। কিন্তু এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় ২০২০ সালের শুরুতে। লেগে যায় প্রায় ২ বছর সময়। চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয় ১৮১৪৭ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে আবার অনেকেরই প্রথম শ্রেণির চাকরি হওয়ার সুবাদে অন্য জায়গায় চলে গেছেন যার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারেরও অধিক । দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সহকারী শিক্ষকের ২ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ পদের মধ্যে ২ লাখ ৪৭ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বর্তমানে ৪৩ হাজার ৬০০টি তাহলে শূন্যপদ পূরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুন শূন্যপদ সৃষ্টি হচ্ছে। তাহলে বিদ্যালয় গুলোতে প্রচুর পরিমাণে শূন্যপদ রেখে শিক্ষক সংকট চলতে দেওয়ার যৌক্তিকতা কি? এর সমাধান কি হবে না? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চরম অবহেলা, অদক্ষতা ও ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ ব্যবস্থার কারণে ২০১৮ সালের প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী । এর দায় ভার কার? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কি এর দায় এড়াতে পারবে?
এছাড়াও নতুন পদে বর্তমানে ১ লাখ ৯৬৬ জন শিক্ষক পদ সৃজন প্রক্রিয়াধীন। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫ হাজার শিক্ষক পদোন্নতি হলে ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হবে। ৬৫ হাজার হিসাব রক্ষকের পদ সৃষ্টি হবে। প্রাথমিকে দীর্ঘ ১২ বছর প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতি বন্ধ। প্রধান শিক্ষক পদেও অগণিত পদ শূন্য।
তাই মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়ন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তুলতে হলে সবচেয়ে জরুরী প্রাথমিকে বিদ্যমান শূন্যপদসমূহ মুজিব বর্ষে প্যানেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ । প্রাথমিকে প্যানেল প্রক্রিয়া চালু হলে শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষকের অভাবে শিক্ষাদান ব্যহত হবে না। আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে জ্ঞান সর্বস্ব সুনাগরিক হিসেবে।
বাবুল মুন্সী
গোপালগঞ্জ জেলা
সহ-সভাপতি
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটি ।