সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিসিকের ইতিহাসে প্রথম দুই মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে পরের দুই দফায় তিনি হেরে যান। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে তিনি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদ পান। আগের দফায়ও একই পদে ছিলেন কামরান।
একজন পৌর কাউন্সিলর হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব শুরু করা কামরান তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে পরাজয়ের দেখা পান ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে। সেবার ‘ভোটের রাজা’ কামরান আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান বিশাল ব্যবধানে।
২০১৮ সালে জীবনের শেষ নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি নিতে চাননি কামরান। জয়ী হয়েই ভোটের মাঠ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই শেষ নির্বাচনের জন্য ভোট চাইতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। জীবনের শেষ নির্বাচনে তার আকুতি অঝোরে কেঁদেছিলেন কামরান। তার জীবনের অনেকটা সময় তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন জনতার সেবক হিসেবে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে শেষ আবদার নিয়ে আবারো দিনরাত ভোটারদের দুয়ারে ঘুরছেন তিনি। প্রাণের সিলেটবাসীর কাছ থেকে জীবনের শেষ আবদারটুকু পূরণ করেই ঘরে ফিরতে চেয়েছিলেন ‘জনতার কামরান’।
জানা গেছে, সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় গত ৫ জুন করোনাক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন কামরান। পরদিন তাকে স্থানীয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৭ জুন সন্ধ্যায় বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়। এতে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু রবিবার দিবাগত রাতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনকে শোকে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কামরান।
সোমবার সিএমএইচ থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে কামরানের মরদেহ সিলেটে নিয়ে আসা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর ছড়ারপাড়ে নিজ বাসায় কিছু সময় রাখা হয় তাঁর মরদেহ। জোহরের পর ছড়ারপাড় জামে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর তাঁর মরদেহ নগরীর মানিকপীর টিলা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁর মরদেহের দাফন সম্পন্ন হয়। শেষ ইচ্ছা অনুসারে মা-বাবার কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
এদিকে, কামরানের মরদেহ সিলেটে পৌঁছার পর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিজেদের প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে ঢল নামে সবার। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কারণে সবাই সে সুযোগ পাননি।
বার্তা বিভাগ প্রধান